This is Mukthi from Madaripur

শেখ হাসিনা : গণতন্ত্রের মানসকন্যা ও পরিবর্তনের অগ্রদূত

তিনি জাতিকে নতুন এক আশা দিয়েছেন, সেই আশার নাম, রুপকল্প-২০২১, বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করার সেই আশা। তিনি স্বপ্ন দেখিয়েছে সব বাংলাদেশীকে, এক ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন যেখানে সর্বাধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি থাকবে। এবং স্বাধীনতার চার দশক পরে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে জাতিকে কলংকমুক্ত করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন অনুকরনীয় নেতৃত্ব-খাদ্য নিরাপত্তা, শান্তি চুক্তি, সমুদ্র বিজয়, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নতি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষায় সমুজ্জ্বল। আততায়ীর হাতে নিহত বাবা মা, খুনীর রক্তে রঞ্জিত তার ভাইয়েরা, শেখ হাসিনা আসলে শত্রুর আগুনের ছাই থেকে উঠে আসা এক মানুষ যিনি দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। বিপথগামী একদল সেনা কর্মকর্তার হাতে তার বাব মা ভাই সহ পুরো পরিবার নিহত হবার পরে তিনি ৬ বছর নির্বাসনে ছিলেন। ১৯৮১ সালে তার ফিরে আসা ছিলো গণতন্ত্রের ফিরে আসা, দেশের উন্নয়ন ও প্রগতির ফিরে আসা সেই সাথে অনির্বাচিতভাবে ক্ষমতাসীন সরকারের বিদায়। নিজের নীতি ও আদর্শকে সমুন্নত রাখার এই যাত্রায় ১৯ বার আততায়ীর হামলার শিকার হয়েছেন যার মধজে সর্বশেষ ছিলো ২০০৪ এর ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা।SHBLOG

এখনো তাঁর হাসি প্রাণবন্ত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনার স্বপ্নের সোনার বাংলা যেখানে থাকবে না ক্ষুধা ও দারিদ্র্য, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যেই বেঁচে আছেন তিনি। জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’র মাঝি এখন তিনিই।আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ হাসিনা, এই ৬৯ বছর বয়সেও, তাঁর কাছে দেশের চেয়ে বড় কিছু নাই।তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এবং কন্যাসায়মা ওয়াজেদ পুতুলও মায়ের মত একই আদর্শ ধারণ করেন। তার প্রয়াত স্বামী ডঃ এম ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন একজন স্বনামধন্য পরমাণু বিজ্ঞানী।

উন্নয়নের পথ প্রদর্শকshhom.jpg

শেখ হাসিনার দিনবদলের যাত্রা শুরু হয়েছিলো ২০০৮ সালে। ২৯শে ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টির মধ্যে ২৬৪ টি আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট জয়লাভ করলে শুরু হয় রুপকল্প ২০২১ এর পথে শুভযাত্রা।তাঁর নেতৃত্বে জাতীয় প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয় ৭.১১ শতাংশ, মাথা পিছু আয় বেড়ে হয় ১৪৬৬ মার্কিন ডলার, দারিদ্র্যের মাত্রা কমে হয় অর্ধেক যা জনসংখ্যার ২২ শতাংশ, এক কোটি বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে।

সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারের রাইয়ের পরিপুর্ণ বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অতন্দ্র প্রহরী
মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন

বাংলাদেশের পতাকা যারা ধ্বংস করতে চেয়েছিলো, তাদের হাতে পতাকা সুরক্ষিত নয়। কিন্তু পুর্ববর্তী সরকার, সেই যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে পতাকা বহনের সুযোগ করে দিয়েছিলো মন্ত্রী করে। ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়ে, শেখ হাসিনে জাতিকে সেই লজ্জা থেকে নিস্কৃতি দিয়েছেন। তিনি বহু আকাংক্ষিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছেন। তাঁর সরকারের অধীনেই আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল গঠন করা হয়। দুইজন দাগী যুদ্ধাপরাধীর, ইতোমধ্যেই ফাঁসীতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে। আরো অনেকেই বিচারের অপেক্ষায় আছে। এই বিচার ৩০ লক্ষ শহীদ ও ৩ লক্ষ নির্যাতিত নারীর আত্মার সম্মান রক্ষার জন্যে।

বিশ্বশান্তির দুতshhunger.jpg
তার প্রথম শাসনামলে (১৯৯৬-২০০১) শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ও বাঙ্গালীদের মধ্যের দীর্ঘদিনের সশস্ত্র সংগ্রামের সমাপ্তি হয়। ১৯৯৮ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি, শান্তি বাহিনীর প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র লাড়মা খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অস্ত্র সমর্পন করে। ১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনা ভারত পাকিস্তানে যান, তাদেরকে পরমাণু যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার আহবান জানাতে। এর আগে দুই দেশের মধ্যে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষামুলক বিস্ফোরণের কারনে উত্তেজনা চলছিলো।

বৈষয়িক কূটনীতিতে দূরদর্শী নেতা
দুরদর্শী বিদেশ নীতির মাধ্যমে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর সাথে সর্বকালের সবেচেয়ে নৈকট্যপুর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে সমর্থ হয়েছেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তির জন্যে তিনি ইউনেসকো শান্তি পুরস্কার পান। ১৯৯৮ সালে তিনি নিখিল ভারত পরিষদের কাছ থেকে মাদার তেরেসা পদকও পান। ১৯৯৯ সালের ১৫ই মে, তিনি হিগ শান্তি পরিষদের সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন। ১৯৯৯ সালে, শেখ হাসিনা সেরেস শান্তি পদক পান যা বিশ্ব খাদ্য পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারপ্রধানদের দেয়া সর্বোচ্চ পুরস্কার।

bangla 3-jpeg

গণতন্ত্রের পথপ্রদর্শক

১৯৭৫-১৯৯৫
এই সময়, দেশকে গণতান্ত্রিক পথে ফিরিয়ে আনতে অগ্রণী ভুমিকা রাখেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালে তার পিতাকে পুরো পরিবারসহ মেরে ফেলা হয় বিপথগামী কিছু আর্মি অফিসারের নেতৃত্বে। শেখ হাসিনা ৬ বছর নির্বাসনে থেকে ১৯৮১ সালে দেশে ফেরেন। সেই থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত ৯টি দীর্ঘ বছর রাজপথে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন সামরিক স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তার দল হয় প্রধান বিরোধী দল।

১৯৯৬-২০০০shhat.jpg
শেখ হাসিনার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে। সেই সময় তার সরকার যমুনা বহুমুখী সেতু নির্মাণ করে, যা ছিলো সেই সময় বিশ্বের দীর্ঘতম সেতুর তালিকায় একাদশতম। ১৯৯৮ সালের বন্যার সময়, তাঁর সরকার ২ কোটি বন্যা দুর্গত মানুষকে বিনামুল্যে খাদ্য প্রদান করে। তাঁএ নেতৃত্বাধীন সেই সরকারের আমলে উল্লেখযোগ্য সাফল্যসমুহ হচ্ছে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পার্বত্য শান্তি চুক্তি, ২১শে ফেব্রুয়ারিকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা, এবং বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি।

২০০১-২০০৭
২০০১ থেকে আবারো জাতির ইতিহাসে কালো অধ্যায় শুরু হয়। বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসে। যুদ্ধাপরাধীদেরকে দেয়া হয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এই সময়েই জঙ্গীবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠে, ৬৪ জেলায় বোমা মারে। ২০০৪ সালের ২১শে আগষ্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তার জনসভায় গ্রেনেড হামলা করা হয়।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের সর্বাত্মক আন্দোলনের ফলে সাজানো নির্বাচন বাতিল করতে বাধ্য হয় ততকালীন সরকার। জরুরী অবস্থা ঘোষিত হয়। নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হয়। শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে নির্বাসনে পাঠানোর ষড়যন্ত্র করা হয়। ২০০৭ এর ১৬ জুলাই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।shamsun-nahar

২০০৮-২০১৩
ব্যাপক জনবিক্ষোভের মুখে তাঁকে ২০০৮ এর ১১জুন প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়। তিনি চিকিৎসার জন্যে বিদেশ যান এবং ডিসেম্বরের ৪ তারিখে দেশে ফিরেন। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়, শেখ হাসিনা “দিন বদলের সনদ” – তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একচেটিয়া বিজয় লাভ করে। তাঁর এই শাসনামলে, জাতীয় প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয় ৬.৫১, সকল খাতের ডিজিটালাইজেশন করা হয়, অবকাঠামো খাতের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়, জঙ্গীবাদ কঠোর ভাবে দমন করা হয় এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় রায় কার্যকর শুরু হয়।shd

২০১৪ থেকে এখন পর্যন্ত
রুপকল্প-২০২১ এ সাধারণ মানুষের বিশ্বাস এবং ভরসার জন্যে সাধারন মানুষ তাঁকে আবার ২০১৪ তে নির্বাচিত করে। এই বার, তাঁর সরকার নিজ উদ্যোগে এবং অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ শুরু করে যা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রাজধানী ঢাকার সাথে সংযুক্ত করবে। তার সাথে, ঢাকায় মেট্রো রেইল প্রকল্প, দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুত প্রকল্প, ঘরে ঘরে বিদ্যুত নিশ্চিতকরণ, জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৭ এ উন্নীতকরণ সহ আরো কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নিয়ে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।

জাতির সার্বভৌমত্বের প্রতীক
তার দুরদর্শী বৈদেশিক নীতির সুফল হিসেবে, ভারতীয় লোকসভায় ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি পাশ হয়েছে। এর দলে ছিটমহলবাসীর চার শতকের দুঃখ দুর্দশার অবসান হতে যাচ্ছে। তার ২০০৯-২০১৪ শাসনামলে, বাংলাদেশ দুইটি ঐতিহাসিক সমুদ্র সীমান্ত মামলায় জয়লাভ করে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে।bangla 4-jpeg বাংলাদেশ ভারতের সাথে বঙ্গোপসাগরের বিরোধপূর্ণ ২৫,৬০২ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১৯,৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার জায়গা পায়।

নারী ক্ষমতায়নে অগ্রপথিক
তিত্নি নিজেই বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ১০০ নারীর মধ্যে একজন। অন্য নারীদেরকেও উদ্দীপ্ত করতে অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। নারী শিক্ষায় তাঁর অবদানের জন্যে তিনি ইউনেসকোর শান্তিবৃক্ষ পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশকে ডিজিটাল করায় তাঁর নানা উদ্যোগ এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অবদানের জন্যে গত বছর জাতিসংঘ তাঁকে সাউথ সাউথ পুরস্কার দেয়।

সহজাত নেতৃত্বshco
তিনি ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন-একই বছর ভারত – পাকিস্তান স্বাধীন হয়। বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ হয়। তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পাকিস্তানের শোষণমুলক নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতেই জীবনের বেশিরভাগ সময় পার করে দেন।ছাত্রনেতা হিসেবে শেখ হাসিনা স্বাধীনতাপুর্ব আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৬২র আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় অংশ গ্রহণ ছিলো।shahifa3

ইডেন কলেজের সহ সভাপতি হিসেবে, তিনি দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশ নেন। তাঁর সেই আন্দোলন সফল হয়। ভাষা শহীদেরা ১৯৫২ সালে বাংলাভাষার জন্যে আন্দোলন করতে গিয়ে প্রাণ দেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পাকবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন এবং তাকে পাকিস্তানের একটি জেলে বন্দী করে রাখা হয়। শেখ হাসিনা তাঁর মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের সাথে গৃহবন্দী থেকে মুক্তিযুদ্ধে কৌশলগত ভুমিকা রাখেন। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

জঙ্গি গোষ্ঠীর একমাত্র লক্ষ্যবস্তু
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কারণে বার বার তিনি হয়েছেন জঙ্গি গোষ্ঠীর একমাত্র লক্ষ্যবস্তু। এ পর্যন্ত তিনি ১৯ বার মৃত্যুর কাছাকাছি থেকে ফিরে এসেছেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট এ গ্রেনেড হামলা যার মধ্যে অন্যতম। ঐদিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ যেন পরিণত হয়েছিলো মৃত্যুপুরীতে। গ্রেনেড হামলা হয়েছিলো শেখ হাসিনার সন্ত্রাস বিরোধী গণমিছিলে। শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলার জন্য গ্রেনেডের পর ছোড়া হয়েছিলো গুলি। প্রায় ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী সেদিন শহীদ হয়েছিলেন। রাস্তা পরিণত হয়েছিলো রক্ত আর ছিন্ন বিচ্ছিন্ন মাংসের স্তুপে। জননেত্রী শেখ হাসিনা তখন থেকেই বয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁর কানে শ্রবণজনিত সমস্যা।

উন্নত বাংলাদেশের পথিকৃৎ
শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও দেশ পরিচালনার নীতি পরিবর্তন করেছে প্রায় ২ কোটি মানুষের জীবনযাত্রা। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দারিদ্র্য বিমোচনে তাঁর প্রণীত ৬ দফা গৃহীত হয়েছে। সারাবিশ্বে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থা শেখ হাসিনা প্রণীত দারিদ্র্য বিমোচন নীতি অনুসরণ করে যাচ্ছেন।

ভিশন ফিশন ২০৩০ এবং বি এন পি'র রুপকল্প কপি রাইটঃ

বিগত ১০ মে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া রাজধানীর একটি ৫ তারকা হোটেলে তাদের তথাকথিত ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেন। বিএনপি ক্ষমতাতে গেলে কি কি কাজ করবেন তার একটা দিক নির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা করেছে তাদের ভিশনে। বিএনপি তাদের ভিশনে যে সমস্ত কথা বলেছে তা তাদের সাম্প্রতিক সহিংস রাজনীতি থেকে জনগণের চোখ ফেরাতে চটকদার ঘোষণা ছাড়া আর কিছু না।

বিএনপি তাদের ভিশন ২০৩০ তে নতুন তেমন কিছুই নেই, তারা যে সমস্ত অঙ্গীকার করেছে ক্ষতায় গেলে তারা সেগুলি বাস্তবায়ন করবে তার অধিকাংশই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হয় বাস্তবায়ন হয়ে গেছে বা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বিএনপির ভিশন ২০৩০ এর কিছু পয়েন্ট একেবারে স্ববিরোধী যদি আমরা তাদের সর্বশেষ বিগত ১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত এই দুই মেয়াদের সরকারের দিকে খেয়াল করি। এবার দেখবো বিএনপির ভিশন ২০৩০ এর একটি পর্যালোচনা।

রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি:
বিএনপি তাদের ভিশন ২০৩০ তে বলেছে তারা সকল মতের উপর শ্রদ্ধাশীল থাকবে। দেশের সকল সম্প্রদারে মানুষের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট থাকবে এমনকি যদি তারা সংখ্যায় একজনও হয়। সকল প্রকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অবসান করারও ঘোষণা দেয়া হয় তাদের ভিশনে। সকল প্রকার রাজনৈতিক সহবস্থান নিশ্চিত করা হবে বলেও জানানো হয় তাদের ভিশনে। বিএনপির এই সুন্দর কথার বিপরীত দিক যদি দেখি তাদের অতীত ইতিহাস তাহলে বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা। বিএনপি-জামায়াতের সর্বশেষ ক্ষমতাকালীন সময় ২০০১-০৬ এ বিরোধী আওয়ামী লীগের ২৫ হাজার নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে বিএনপির প্রতিহিংসার রাজনীতিতে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরেই ব্যাপক প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘুদের উপর। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা, লুটের পাশাপাশি শতাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারীদের উপর। অ্যামিনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, কানাডা সরকার, ফ্রিডম হাউজ এবং মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এর মত এই বিষয়ে বহু আন্তর্জাতিক সংগঠন বিএনপি-জামায়াত জোটের সেই সময়কার সংখ্যালঘুদের উপর চালানো ধর্ষণের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ২০০৯ সালে বিচার বিভাগীয় তদন্তে নৃসংশ অপরাধে বিএনপি এবং তাদের জোট সঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর ২৬ হাজার নেতা-কর্মীর সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছে।

অতি সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি সহযোগীর ভূমিকার পালন করেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাঁধাগ্রস্ত করতে যখন জামায়াত ইসলামী দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিন্দুদের উপর হামলা চালায়, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং মন্দিরে হামলা ও ভাংচুর করে। একই ভাবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন প্রতিরোধ করতে না পেরে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের উপর যখন হামলা চালায় জামায়াত তখনও বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সহযোগীর ভূমিকা পালন করে। নির্বাচন বানচাল করেত মাসব্যাপী চালানো সহিংসতায় ৪৬ জন নিহত হয়। হাজার হাজার গাড়ি ভাংচুর করা হয়, পুড়িয়ে দেয়া হয় অসংখ্য গাড়ি সেই সময়। পুলিশ, বিজিবি, আনসার এবং সেনা বাহিনীর ২০ জন সদস্য নিহত হয় বিএনপি-জামায়াত জোটের রাজনৈতিক সহিংসতায়।

সেই সময় নির্বাচনকে প্রতিরোধের নামে সরকারি অফিস, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তার পাশে ছোট খাট দোকান পাট, মসজিদ মন্দির এবং নিরীহ গরুকে পর্যন্ত জীবন্ত পুড়ে মরতে হয়েছে বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসের কাছে। এমনকি যে ধর্ম নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করে এবং মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান শরীফের কয়েক হাজার কপি পুড়িয়েছে তারা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের কাছে। ট্রেনের ফিস প্লেট তুলে ট্রেনকে লাইনচ্যূত করেছে, ক্ষতি হয়েছে ট্রেনের শত শত বগি। ২০১৪ সালের নির্বাচন প্রতিহত করতে ৫ জানুয়ারি ৫৮২টা স্কুল পুড়িয়েছে দিয়েছিল বিএনপি-জামাত। ৫ জানুয়ারি প্রিসাইডিং অফিসার সহ ২৬ জন নিহত হয় তাদের সহিংসতার জন্য। সেদিন অসংখ্য আওয়ামী লীগ সমর্থক এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িতে হামলা, বাংচুর এবং লুটপাট করা হয়।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ২১ জেলায় ১৬০ জায়গাতে নৃশংস হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘর-বাড়ি লুটপাট করা হয়। ওই সব হামলার কারণে প্রায় ৪ মিলিয়ন টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের। হিন্দুদের বাড়ি ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মন্দির ভাংচুর ও লুটপাট করা হয় সবচেয়ে বেশি ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর। দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, চাঁদপুর, বাগেরহাট, যশোর, নড়াইল, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, জয়পুরহাট, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, রংপুর, গাইবান্ধা, নিলফামারী এবং ঠাকুরগাও জেলা বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু ছিল।

নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি থেকে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসের আরেক রাজত্ব কায়েম করে। কয়েক মাসব্যাপী আন্দোলনের নামে সহিংসতা চালিয়ে ২৩১ মানুষ মারে বিএনপি-জামায়াত। নিহতদের অধিকাংশই তাদের সন্ত্রাসীদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে নিহত হয়। আহত হয়ে হাসপাতালের বেড কাতরাতে থাকে ১ হাজার ১৮০ জন মানুষ। পেট্রোল বোমায় ২ হাজার ৯০৩ টি গাড়ি পুড়েছে, ট্রেনের ১৮টি বগি পুড়িয়ে দিয়েছে এবং ৮টি লঞ্চে আগুন দিয়েছে সেই সময় বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। টার্গেট করে ৭০টি সরকারী অফিস ভাংচুর করেছে বা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছে এবং ৬টি ভূমি অফিস জ্বালিয়ে দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা।

রাষ্ট্রীয় নীতিমালায় পরিবর্তন:
বিএনপি তাদের ভিশন ২০৩০ তে বলেছে তারা ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা হ্রাসে পদক্ষেপ নিবে। কিন্তু কিভাবে কতটুকু ক্ষমতা কমানো হবে তার কোন সুনির্দিষ্ট বর্ণনা নেই তাদের ভিশন ২০৩০ তে। ব্রিটিশ সংসদীয় রীতিতে বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা থাকে প্রধানমন্ত্রীর হাতেই। কোন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়া কিভাবে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো সম্ভব তা আসলে বোঝা কষ্টকর।

বিএনপির ভিশন ২০৩০ অনুযায়ী ভবিষ্যতে তারা ক্ষমতায় গেলে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট করা যায় কিনা তা ভেবে দেখবে তারা। যখন কেউ দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রস্তাব করে তখন ভেবে দেখার কোন সুযোগ নেই। এমন প্রস্তাব রাখলে এর পিছনে অবশ্যই যুক্তি সংগত কারণও ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন রয়েছে। এমন প্রস্তাবের পর বেশ স্বাভাবিকভাবেই বেশ কিছু প্রশ্ন দেখা দেয় তা হলো: উচ্চ-কক্ষ কি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে গঠিত হবে না অনির্বাচিতদের মনোনয়নের মাধ্যমে উচ্চ-কক্ষে স্থান দেয়া হবে? ক্ষমতার ভারসাম্য কিভাবে রক্ষা রক্ষা হবে? ভিশন ২০৩০ ঘোষণার আগে বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে তারা সংসদের উচ্চ-কক্ষ অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে গঠন করার কথা ভাবছেন।

বিএনপি আওয়ামী লীগের সময়ে করা সংবিধানের আনীত সংশোধনকে বাতিল করতে চায়। বিশেষ করে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা সংক্রান্ত সংশোধনী তারা বাতিল করতে চায়। বিএনপির এটা মনে রাখা উচিত যে সংবিধানে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট। দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপীল বিভাগের রায়ের পরেও কি বিএনপি এটা পুন:প্রবর্তন করতে চায়?

বিএনপি সংবিধানে গণভোটের বিধান সংযুক্ত করতে চায়। কিন্তু তারা কি কি কারণে গণভোটের আয়োজন করা হবে সেই বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা দেয়নি। গণভোটের বিরুদ্ধে অসংখ্য যুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের গণভোট সংক্রান্ত খুব বাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে বিএনপির আগের সময়ে, বিশেষ করে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময়ে গণভোটে দেখা গেছে শতভাগের বেশি ভোট কাস্টিং হয়েছে।

বিএনপি জাতীয় সংসদকে সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চায়। কিন্তু বিএনপির সাম্প্রতিক অতীত অভিজ্ঞা এই কথা বলে না। তাদের বিগত দুই মেয়াদ সরকারের সময় এবং বিরোধী দলের সময়েও সংসদীয় রাজনীতিকে সংসদে কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে স্থাপন করতে পারেনি। ৯ম সংসদে বিএনপি সংসদ বর্জনের রেকর্ড করে। তারা ৪১৮ কার্য দিবসের মধ্যে ৩৪২ কার্য দিবসই সংসদ অধিবেমণ বর্জন করে। একই পার্লামেন্টে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও বিরোধীদল বিএনপিকে সংসদীয় কমিটির চারটিতে সভাপতির পদ দেয়। কিন্তু ৮তম সংসদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করলে সেখানে সংসদীয় কমিটির কোন কমিটিতে আওয়ামী লীগকে রাখা হয়নি। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে বিএনপি সংসদে বিরোধী দলকে কখনো সিদ্ধান্ত গ্রহনে ভুমিকা রাখার সুযোগ দেয়নি। হঠাৎ করে যে তারা নিজেদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করবে তেমনটা ভাবারও কোন কারন নেই, কারন এখনো তাদের দলীয় নেতৃত্ব ও গঠন অপরিবর্তিত এবং কুখ্যাত ‘হাওয়া ভবনে’র মতো দলীয় ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কথাতেই দলের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা:
বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সামাজিক বিচার, মানুষের মর্যদা এবং সবার সমতা নিশ্চিত করার কথা বলেছে তাদের ঘোষিত ভিশন ২০৩০ এ। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেও আশ্চর্যজনকভাবে দলটি ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিষয়ে চুপ থেকেছে। বেগম জিয়া আওয়ামী লীগের সময়ে করা সংবিধানের সংশোধনী বাতিল করে পুনরায় সংবিধান সংশোধন করতে চায়। এখানে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মত করেই কি বেগম জিয়া আবারো মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের সংবিধানের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র পাল্টে ফেলতে চান কিনা? বিএনপির এটা পরিস্কার করা দরকার যে, চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে তাদের অবস্থান কি হবে যদি তারা নির্বাচিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী দল জামায়াত-ই –ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক মিত্রতা থাকবে কিনা সে কথা বলেননি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ পরিচালনা করার কথা বলা বেগম খালেদা জিয়া।

মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে। কিন্তু বেগম জিয়া বলেছেন তারা ক্ষমতায় গেলে বাঙালী জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করবে। বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম মূল ভিত্তি হলো বাঙালী জাতীয়তাবাদ। এভাবে বিএনপি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধান পরিবর্তন করে কি অসাংবিধানিক পথে নিয়ে যেতে চায়? বিএনপি এটা স্পষ্টভাবে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে কেন বাঙালী জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলদেশী জাতীয়তাবাদ প্রবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়বেন। বাংলাদেশের মানুষকে সংবিধানে বাংলাদেশী হিসবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধান পরিবর্তন করে বাঙালী জাতীয়তাবাদ এর পরিবর্তে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রবর্তন করা হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘার্ষিক।

বিএনপি অভিযোগ করেছে বর্তমানে অপরাধের জন্য দায়মুক্তি পাচ্ছে অপরাধীরা, বিএনপির মুখে এমন শোনা সত্যিই হাস্যকর। বিএনপি হলো সেই দল যার প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়া দালাল আইন বাতিল করে যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের জেল থেকে মুক্ত করে দেয়, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে বিচার করা যাবে না এমন দায়মুক্তি দিয়েছিল। ২০০১ সালে ক্ষমতাতে এসে বিএনপি ২০০২ সালে অপারেশন ক্লিনহার্ট পরিচালনা করে। সেখানেও সেই অভিযানের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। তবুও, যদি তারা সত্যিই আইনের শাসনের কথা বলে থাকে তবে তাদের স্পষ্টভাবে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিচার কাজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। বিএনপি ক্ষমতাতে গেলেও কি আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখতে পারবো? না তারা আবারো যুদ্ধাপরাধী এবং রাজাকারদেরকে পুর্নবাস করবেন অতীতে যেমনটা জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে করে এসেছে।

আর একটি ভয়ঙ্কর বিষয়ের অবতারণা করেছেন বেগম জিয়া তার ভিশন ২০৩০ তে। বিএনপি ক্ষমতাতে গেলে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যার তালিকা প্রস্তুত করবে। এটা এই কারণে বলা হয়ে থাকতে পারে যে, খুব সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন বেগম জিয়া এবং তার দলের নেতারা। বেগম জিয়ার মন্তব্য পরাজিত পাকিস্তানী সরকারের কথারই প্রতিধ্বনি। পাকিস্তানের কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই, যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াত ইসলাম এবং পাকিস্তানের পরাজিত সেনা বাহিনী বরাবরই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক করে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না যে বিএনপি তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এবং কি উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা বিতর্ককে সামনে নিয়ে এসেছেন।

দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন:
বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব যদি বলে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়বে তারা তাহলে বিষয়টা একটু আশ্চর্য লাগে বৈ কি! ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোটের ৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতি সূচকে লজ্জা জনকভাবে দুর্নীতিতে পর পর ৪ বার চ্যাম্পিয়ন হয়। এতিমের টাকা চেকের মাধ্যমে তুলে আত্মসাতের মামলাসহ বেশ কয়েকটি দুর্নীতির মামলা চলমান রয়েছে স্বয়ং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেই।

বেগম জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ২০০১-০৬ পর্যন্ত সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে দুর্নীতি করার কালে সবচেয়ে বেশি নিন্দিত ছিলেন। দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েবর্তমানে যুক্তরাজ্যে ফেরারী হয়ে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো-এফবিআই এর এজেন্ট পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে দিয়ে গেছে।

বেগম জিয়ার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো বড় ভাই তারেক রহমানের থেকে কম দুর্নীতিবাজ ছিলেন না। ২০০৪ সালে মার্কিন আদালত জার্মান প্রতিষ্ঠান সিমেন্সকে ৫ লক্ষ ডলার জরিমানা করে কোকোকে ঘুষ দেওয়ার অপরাধে। এর ফলে সিঙ্গাপুর সরকার সেদেশে কোকোর ১৪ লক্ষ মার্কিন ডলার সমপরিমান সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে কারন সিমেন্সের ঘুষের টাকা কোকো সিঙ্গাপুরেই পাচার করে। সেই পাচার হওয়া অর্থের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং সিঙ্গাপুরের সহায়তায় ইতিমধ্যে দেশে ফেরৎ নিয়ে এসেছে।

প্রশাসন ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা:
বিএনপি তাদের ভিশন ২০৩০ তে বলেছে রাজনৈতিক প্রভাব বলয়ের বাইরে রাখা হবে প্রশাসন এবং পুলিশকে। কিন্তু সর্বশেষ ২০০১ সালে তারা যখন ক্ষমতায় আসে তখন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আকারে প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়। অনেক দেশ প্রেমিক সরকারি কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যূত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের এবং বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তাদেরকে হয় চাকরিচ্যূত করা হয় নাহলে ওএসডি করে রাখা হয়। দেশের ইতিহাসে প্রশাসনে দলীয়করণের সকল ইতিহাস ভঙ্গ কওে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। বলতে গেলে সমগ্র প্রশাসনে চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছিল।

বিএনপি তাদেও ভিশন২০৩০ তে বলেছে তারা সরকাওে গেলে স্থানীয় সরকারের বরাদ্দ বাড়াবে। আমরা যদি বিএনপির সময়কার তুলনা করি তবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তাদেও থেকে চারগুণ বেশি বরাদ্দ দিয়েছে স্থানীয় সরকারের জন্য। বিএনপির সময় ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন বরাদ্দের বিপরীতে আওয়ামী লীগ সরকার স্থানীয় সরকারের জন্য বরাদ্দ করেছে ৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রথম সরকার ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকারকে গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে ভাগ করে এই বরাদ্দ করে।

বেগম জিয়ার ভিশন ২০৩০ তে প্রশাসন, প্রতিরক্ষা এবং পুলিশ বাহিনীতে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এর সবগুলোই বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার হয় বাস্তবায়ন করে ফেলেছে বা বাস্তবায়নের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্র্তমান সরকার সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা দ্বিগুণ করেছে ২০১৫ সালে ৮ম পে স্কেলের মাধ্যমে। (অতি সাম্প্রতিক সময়ে সরকারী চাকরিজীবীদের আরো একদফা বেতন-ভাতা বাড়ানোর জন্য সরকার কমিটি গঠন করেছে।) বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী এবং বিমান বাহিনী সর্বাধুনিক সরঞ্জামে সুসজ্জিত হয়েছে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যুগপোযোগী করতে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সক্ষমতা বেড়েছে কয়েকগুণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সামরিক বাহিনীর বরাদ্দ আগের তুলনায় দ্বিগুণ করে। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে সামরিক বাহিনীর বরাদ্দ ছিল ২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০০৯ সালে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে করা হয়েছিল ১.১৮ বিলিয়ন ডলার।

নাগরিক সেবা:
বেগম জিয়া তার ভিশন ২০৩০ তে বিদ্যুৎ ও স্বাস্থ্য সেবার মত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর উপর জোড় দিয়েছেন। কিন্তু এই দুই ক্ষেত্রেই বিএনপির অতীত ইতিহাস সুখকর নয়। বেগম জিয়ার ১৯৯১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত প্রথম সরকারের মেয়াদে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট। সেই সময় দেশে মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সবিধা পেত। সেখান থেকে ১৯৯৬-২০০১ সালে শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের মেয়াদে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮শ’ ৩ মেগাওয়াটে এবং তখন দেশের ৩০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসে। বিএনপির দ্বিতীয় মেয়াদে শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে পারেনি বেগম জিয়ার সরকার। বিভিন্ন কারণে ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩শ’ ৭৮ মেগা ওয়াটে। এই সময়ে মধ্যে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ না বাড়াতে পারেনি। শুধুমাত্র ৮ শতাংশ মানুষ বিএনপি বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে পেরেছিল। বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপদন ১৫ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি। বর্তমানে দেশের ৭৮ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পায় এবং ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নিরলসভাবে কাজ কওে যাচ্ছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্ভাবিত কমিউনিটি ক্লিনিক বর্তমানে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত লাভ করেছে। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য স্থানীয় সরকার পর্যায়ে ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এখন বিশ্বব্যাপী রোল মডেল। শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের মেয়াদে দেশব্যাপী ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরই জনগণের দৌরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার শেখ হাসিনার ওই উদ্যোগটি বন্ধ করে দেয় তখনকার সরকার। তারা অন্যকোন নামে বা অন্যকোন ভাবে স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার কোন উদ্যোগই নেয়নি। ২০০৯ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পরই আবারও দেশব্যাপী ১৬ হাজার ৫শ’ কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হয়েছে যেখানে মান সম্পন্ন প্রাথমকি চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

আর্থ-সামজিক উন্নতি:
দারিদ্র বিমোচনের ক্ষেত্রে বিএনপির উল্লেখযোগ্য তেমন কোন অর্জন নেই। ১৯৯৬ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতা ছাড়ে তখনও দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে। ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাগ্রহণ কওে তখন ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করতো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস পরিশ্রমে ২০০১ সালে মাত্র পাঁচ বছরে সেই সংখ্যা ৩৪ শতাংশে নামিয়ে আনেন। পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় সেই সংখ্যা আবারো বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮ দশমিক ৪ শতাংশে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর দারিদ্র্যেও হার বর্তমানে মাত্র ২২ দশমিক ২২ শতাংশ। বেগম জিয়া তার ভিশন ২০৩০ তে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কথা বলেছেন। কিন্তু সেই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অনেক কিছুই আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাস্তবায়ন হয়েছে এবং অনেক কিছুই বর্তমানে চলমান রয়েছে।

সামজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির কথা বলেছেন বেগম জিয়া। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির ১১টি প্রকল্প চালু রেখেছিল ২০০১-০৬ পর্যন্ত আর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ১৪৩টি প্রকল্প চালু রেখেছে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি নিশ্চিত করতে। বিএনপি সরকারের শেষ সময়ে ২০০৬ সালে সামজিক নিরাপত্তা বেষ্টনিতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ১১৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন মার্র্কিন ডলার সেটা আওয়ামী লীগ সরকার বাড়িয়ে ২০১৬ সালে করেছে ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। সমাজের অনগ্রসর মানুষদেরকে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগ সরকার যা যা করার দরকার তার সবই করছে।

খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে কথা বলেছেন বেগম জিয়া। কিন্তু বাস্তবতা হলো বিএনপির দুই মেয়াদেই বাংলাদেশে ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি ছিল। দেশের উত্তরাঞ্চলের নির্দিষ্ট একটি এলাকায় মঙ্গার প্রকোপ ছিল যাকে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দুর্ভিক্ষ বলা যেতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার মঙ্গা শব্দটাকেই জাদুঘরে পাঠিয়েছে। এখন বাংলাদেশের কেউই আর না খেয়ে থাকে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতি জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার লড়াইয়ের রাজনীতি। সেখানে তার অগ্রাধিকার বাংলাদেশের কোন মানুষ না খেয়ে থাকবে না। বিএনপির ১৯৯১-১৯৯৬ সালের সরকারের সময়ে বাংলাদেশ ৪ মিলিয়ন মেট্রিক টনের খাদ্য ঘাটতির দেশ ছিল। সেখানে থেকে ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সরকারের সময়ে ২০ দশমিক ৭০ মিলিয়ন খাদ্য উৎপাদন কওে খাদ্যে উদ্বৃত্ত রেখে যায়। আবারো ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত করে।বর্তমানে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ৩৯ মিলিয়ন মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছে।

বিএনপি ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে ৫০০ হাজার মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয়ের কথা বলেছে। কিন্তু বিএনপির অতীতে শাসনামলের দিকে তাকালে এমনটি আশা করা যায় না। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত তাদের শাসনামলে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৩৮৬-৫৬০ ডলার পর্যন্ত বেড়েছিল। এর বিপরীতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিচু আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪শ’ ৬৬ মার্কিন ডলার।

বিএনপি বাংলাদেশকে নিরক্ষরমুক্ত একটি দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। ১৯৯৬ সালে যখন তারা ক্ষমতা ছাড়ে তখন দেশে স্বাক্ষরতা হার ছিল ৪৪ শতাংশ মাত্র। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মাত্র বছওে ২০০১ সালে দেশে স্বাক্ষরতার হার দাঁড়ায় ৬৫ শতাংশে।২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে স্বাক্ষরতা হার বাড়াতে ব্যর্থ হয়। শুধু ব্যর্থই হয়নি তাদেও ৫ বছরের শাসনামলে স্বাক্ষরতা হার আবারো ৪৪ শতাংশে নেমে যায়। বর্তমানে আওয়ামী লীগের সময়ে দেশে স্বাক্ষরতা হার ৭২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তাই বেগম জিয়া যখন বলেন তারা দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূও করবেন তাকে ভাওতাবজি ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। তাদেও ভিশন কি দেশকে আবারো ৪৪ শতাংশে স্বাক্ষরতায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া?

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ:
বিএনপি যখন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদেও বিরুদ্ধে কথা বলে তখন সেটাকে ফাঁপা আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। কারণ দেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সবাই জানে তাদের সর্বশেষ ২০০১-০৬ সময়কারের সময়ে কিভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পৃষ্টপোষকতা করা হয়েছে। তাদের সময়েই জামাতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ-জেএমবি’র আত্ম প্রকাশ ঘটে। ওই সংগঠনটি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে তৎকালীন সময়ের অনেক এমপি-মন্ত্রীর ছত্র ছায়ায় বিকাশ লাভ করে। আরেকটি ভয়ঙ্কর জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ শুধুমাত্র তাদের সাহায্য-সহযোগিতাই লাভ করেনি, স্বয়ং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পুত্র তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ মদদে বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালায় তারা। এই রকম বহু উদাহরণ দেখানো যায় যে, কিভাবে বিএনপি সরকার সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদকে উস্কে দিয়েছে। তাদের সরকারের সময়ে বাংলাদেশকে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের আতুর ঘর হিসেবেই গড়ে তুলেছিল বিএনপি এবং তাদের জোট সঙ্গী জামায়াত। তারা সকল ধর্মের মানুষের মধে সম্প্রতি বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছেন। কিন্তু তাদের সরকারের সময় বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু এবং আহমেদিয়া সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন বাংলাদেশে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে।

তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন:
বিএনপি তাদের ভিশন এ তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেছে। তারা নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগের জন্য সাব মেরিন ক্যাবলের কথা বলেছে। কিন্তু নিকট অতীতে ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি জামায়াত জোট ক্ষমতয়া থেকেও সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হয়নি দেশের সকল তথ্য পাচার হয়ে যাবে এমন হাস্যকর যুক্তিতে। সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত না হয়ে বিএনপি তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশকে ১০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। এটা বাংলাদেশের সৌভাগ্য যে আওয়ামী লীগ সরকার সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করেছে। যার ফলে উচ্চ গতি এবং নিরবিচ্ছন্ন ইন্টারনেট পাচ্ছে বাংলাদেশ। বিএনপি ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ফোর-জি নেটওয়ার্ক চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। তারা হয়তো জানে না, আওয়ামী লীগ সরকার দেশব্যাপী সফলভাবে থ্র্রি-জি নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। এই বছরের শেষ নাগাদ দেশে ফোর-জি নেটওয়ার্ক চালু করবে বর্তমান সরকার।

বিএনপি বলেছে তারা আইসিটি শিক্ষা, কৃষিতে তথ্যপ্রযুক্তি, ই-গর্ভানেন্স, পাবলিক সার্ভিসে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করবেন তখন আওয়ামী লীগ সরকার তার সবই ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করেছে ফেলেছ। বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসিবে গড়ে তোলার স্বীকৃতি হিসেব আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই বহু স্বীকৃতি এবং সম্মাননা পেয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিনিয়োগে বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করেছে এরই মধ্যে যা ভবিষ্যতে ক্ষমতাতে গেলে বিএনপি করার ঘোষণা দিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিএনপির ভিশন ২০৩০ তে এমন কোন নতুন পরিকল্পনা নেই যা আওয়ামী লীগ করেনি। যদি আমরা বিএনপির ভিশন ২০৩০ এর দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যা কিছু করেছে বা করছে তা ভবিষ্যতে ক্ষমতাতে গেলে বিএনপি করবে বলে অঙ্গীকার করেছে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা:
বিএনপির ভিশন ২০৩০ বলা হয়েছে তারা ক্ষমতায় গেলে সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমের জন্য নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করবে। কিন্তুবাস্তবতা হলো নিকট অতীতে ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে সাংবাদিকদেও জন্য কঠিন সময় ছিল। ওই সময়ে ১৬ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছে। ৫ শতাধিক মামলা করা হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এবং সমান সংখ্যক পরিমাণ হামলার শিকার হয়েছে সাংবাদ কর্মীরা তাদেও ৫ বছরের শাসনামলে। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের উপর নির্যাতনের সংবাদ প্রকাশের দায়ে বহু সাংবাদিক গ্রেফতার এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ঘোষণা:
জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত যে ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি তাদের ভিশন ২০৩০ তে তার অধিকাংশই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বাস্তবায়ন করছে। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে জাতিসংঘের ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ এবং সক্রিয় নেতৃত্বে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য এবং প্রাকৃতিক সুরক্ষা বিষয়ে আইন করেছে। জীববৈচিত্র রক্ষা, জলাভূমি, বন এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য বিশেষ আইন করেছে। এই সময়ে কমপক্ষে ৮টি আইন নতুন করে করা হয়েছে ২০০৯ সালের আইন সংশোধন করে ভবিষ্যতের বনভূমি সংরক্ষণের জন্য।

দেশে বনভূমির পরিমান বেড়ে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে ২০১৪-১৫ সালের হিসেবে মত যা বিএনপি ক্ষমতা থাকার সময় ২০০৫-০৬ সালে ছিল মাত্র ৭-৮ শতাংশে। আর এটা সম্ভব হয়েছে সরকারের নানাবিধ উদ্যোগের ফলে। সামজিক বনায়ন কর্মসূচি, যা জনগণকে সরাসরি সম্পৃক্ত করা হয়েছে এবং বনায়ন কর্মসূচিকে সম্প্রসারণ করা হয়েছে শহর বা গ্রাম সব জায়গাতে। বর্তমানে প্রতিবছর ১২০ মিলিয়নেরও বেশি গছের চারা জনগণের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। বিএনপির শাসনামলে ২০০১-০৬ সালে যা ছিল মাত্র ৪০ মিলিয়ন গাছের চারা বিতরণ করা হতো। বাংলাদেশ দক্ষিণের উপকূলী এলাকায় সাইক্লোন থেকে রক্ষার জন্য গ্রিনবেল্ট প্রজেক্ট এর মাধ্যমে বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কারণে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মানুষের মৃত্যুহার কমানো সম্ভব হয়েছে। ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলা এবং ২০১৩ সালে ঘূর্ণিঝড় মোহসিনের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে ২শ’ মানুষের। এই সংখ্যা অনেক কম যখন ১৯৯১ সালের একটি মাত্র ঘূর্ণিঝড়ে ১লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল তার সঙ্গে তুলনা করলে।

উন্নয়নশীল দেশেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম দেশ যারা জলবায়ু পরিবর্তন ঝুকি মোকাবেলার কৌশল নির্ধারণ এবং অ্যাকশন প্ল্যান তৈরী করেছে। ২০০৯-১০ থেকে ২০১৪-১৫ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের জন্য ৩৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে। বর্তমান সরকার জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনের জন্য বার্ষিক ৬-৭ শতাংশ বাজেটে বরাদ্দ করছে। দ্য বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড ( বিসিসিটিএফ) গঠন করা হয়েছে সংসদে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এবং বাংলাদেশ সরকার এর জন্য অর্থায়ন করছে।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সবুজ নবায়নযোগ্য জ্বালানীর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অগ্রাধিকার দিয়েছে। সরকার ২০২০ সালের মধ্যে দেশের বিদ্যুতের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানী থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করেছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াবে ২৪ হাজার মেগাওয়াটে এবং এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানী দিয়ে উৎপাদন হবে ২ হাজার ৪শ’ মেগাওয়াট।

যোগাযোগ ও শিল্পঃ
সড়ক ও জনপথ যোগাযোগ নিয়ে বিএনপির অঙ্গীকারের প্রায় সবগুলো প্রকল্প হয় আওয়ামী লীগ সরকার ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করে ফেলেছে নতুবা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। যেমন পদ্মা সেতু, ঢাকা চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে টানেল নির্মাণ, এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এবং ওয়ান বেল্ট রোড উদ্যোগ, দেশব্যাপী মহাসড়কগুলোকে চারলেনে উন্নীত করার সব প্রকল্প আওয়ামী লীগ সরকার বাস্তবায়ন করছে। পর্যটনের ক্ষেত্রেও যেসব অঙ্গীকার করেছে বিএনপি সেইগুলোরও সবই প্রায় হয় বর্তমান সরকার বাস্তবায়ন করেছে নতুবা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বিএনপি যখন বলে তারা ক্ষমতায় গেলে তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক, শিল্প পার্ক এবং ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা করবে তখন এই কথা বলা তাদের জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। কারণ এই সব প্রকল্পই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাস্তবায়ন হচ্ছে দ্রুত গতিতে।

নারী ও শিশুর উন্নয়ন:
বিএনপি নারীর উন্নয়নে কাজ করবে এই কথা শুনলে ফাঁপা আওয়াজ ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। কারণ বাংলাদেশের নারীর উন্নয়নের জন্য সকল কাজের জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় যে দলটি তাদের মুখে এমন কথা সত্যিই হাস্যকর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১১ সালে নারী উন্নয়ন নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের তথ্য অনুযায়ী জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স এ বাংলাদেশ ২০০৬ সালে ৯১ তম অবস্থান করতো। আর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০১৬ সালে ৬৪তম অবস্থানে রয়েছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স এ। বাংলাদেশে এখন প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর উন্নয়ন দৃশ্যমান করেছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। বিএনপির দাবি তারা ক্ষমতায় গেলে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কঠোর আইন করবে কিন্তু বাস্তবতা হলো এই রকম আইন যেমন গৃহনির্যাতন বা নারী পাচার রোধে আইন ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালে শিশু নীতি প্রণনয়ন করেছে এবং সেই আলোকে ২০১৩ সালে জাতীয় শিশু আইন পাস করেছে। শিশুদের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্র বাস্তবায়নও করেছে।

উপসংহার:
বিএনপি ঘোষিত তাদের ‘ভিশন ২০৩০’ রাজনীতিতে তারা নতুন জীবনের সন্ধান করছেন। এটা সহজেই বোধগম্য যে বিএনপির অপরিমাণদর্শী রাজনীতির কারণে তারা জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন বয়কট করার কারণে তারা জনগণ থেকে আরো জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নির্বাচনের সময় সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের জন্য তারা জনগণ থেকে আরো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিএনপির জন্মই হয়েছে হত্যা ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। তাদের সর্বশেষ ক্ষমতার মেয়াদ ২০০১-০৬ এ রাজনীতিতে সন্ত্রাস ও অপরাধের কারণে শুধু আওয়ামী লীগের কর্মীদের কাছে না যারা রাজনীতি সচেতন তেমন সাধারণ মানুষও বিরক্ত। তারা যদি সত্যিকরা অর্থেই একটি ভিশন নিয়ে জনগণের কাছে আসতে চায় তবে তাদের উচিত হবে অতীতের সকল অপকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে রাজনীতি করা। তারা যদি ক্ষমা প্রার্থনা করে তখনই তাদের পলিসি প্রস্তাব নিয়ে জনগণ ভেবে দেখবে।

www.albd.org/

http://muktimusician.blogspot.com/

www.youtube.com/muktimusician
www.myspace.com/muktimusician,
www.shtyle.com/muktimusician,
www.last.fm/muktimusician

Wednesday, June 15, 2016

আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী ১০ জুলাই ২০১৬।

আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী ১০ জুলাই ২০১৬। দেশের সর্ববৃহৎ ও সুপ্রাচীন রাজনৈতিক দলটির সম্মেলন কেবল দলটির জন্যই নয়, দেশের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ।
বর্তমানে দলটি ক্ষমতায় থেকে দেশ, জাতি ও জনগণের উন্নতি ও কল্যাণের লক্ষ্যে জনগণকে দেওয়া অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র দুই বছরের মধ্যে ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন প্রগতিবাদী ও তরুণ মুসলিম লীগ নেতাদের উদ্যোগে পূর্ব বাংলার গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিনিধিত্বকারী গণরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দলটির জন্ম হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুদীর্ঘ প্রায় ৬৭ বছরের ইতিহাসে আমাদের জাতির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক এমন কোনো সুকীর্তি ও অর্জন নেই, যাতে আওয়ামী লীগ দলটির নেতৃত্বের ভূমিকা ছিল না। জনগণের ইচ্ছে-আকাক্সক্ষা ও কর্তব্যের রক্ষক, ধারক-বাহক এবং স্বার্থক রূপকার ও পরিচালক হচ্ছে আওয়ামী লীগ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং এর আগে দুই নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানী আর পরে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানসহ অগণিত কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীদের ত্যাগ-তিতিক্ষা, মেধা-শ্রম, রক্ত-ঘাম, স্বপ্ন-কর্মে দলটি আমাদের জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। এরই ধারাবাহিকতায় নানা বাধা-বিপত্তি ও চড়াই-উৎরাই পার হয়ে বর্তমান দিনগুলোতে দলটি বঙ্গবন্ধু-কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় থেকে অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল উদার গণতান্ত্রিক ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র গড়ে তোলার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
নিতান্ত অন্ধ ও হীন উদ্দেশ্যপূর্ণ ব্যক্তি গোষ্ঠী মহল ও দল ছাড়া দেশবাসী সকলেই স্বীকার করবেন যে, আওয়ামী লীগের ইতিহাস হচ্ছে বাংলাদেশেরই ইতিহাস। উপমহাদেশ তো বটেই এবং এমন কি বিশ্বেও এমন ঐতিহ্যমণ্ডিত গণ-আস্থাসম্পন্ন ও সুপ্রাচীন রাজনৈতিক দল বিরল; যে দল হত্যা-খুন, জেল-জুলুম, হামলা-মামলা, প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সামরিক আইনের বিধিনিষেধ, পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশে ব্যবহারীদের অপপ্রচার এবং দেশি-বিদেশি কায়েমি স্বার্থবাদীদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত প্রতিহত করে জনগণের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সুদীর্ঘ এই সময়কালে প্রতিক্রিয়া ও একাত্তরের পরাজিত শক্তি আওয়ামী লীগকে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করার সবৈব ও সর্বাত্মক হীন প্রচেষ্টা ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। কিন্তু বাংলার মাটি ও মানুষের কাছে আওয়ামী লীগ প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবেই টিকে আছে।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা এবং ৩ নভেম্বর তার সহযোগী জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর পরাজিত শক্তি অপপ্রচার-মিথ্যা প্রচার চালিয়ে এটা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল যে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের দশা হবে ঠিক পাকিস্তানের মুসলিম লীগের মতো। মুসলিম লীগের যেমন মৃত্যু ঘটেছিল, তেমনি আওয়ামী লীগেরও দিন শেষ হবে। বাংলাদেশকে ‘মিনি পাকিস্তান’ বানাতে চেয়েছিল একাত্তরের পরাজিত জাতীয় শত্রুরা, তাই পাকিস্তান ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারেনি ওরা। কিন্তু এটাই বাস্তব যে, আজ জনগণের সমর্থন, আস্থা ও বিশ্বাস অক্ষুণœ রেখে দেশপ্রেমের গভীর দায়িত্ববোধ নিয়ে ক্ষমতায় থেকে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে দলটি দেশ, জাতি ও জনগণের সেবা করে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তাই এই দলের সম্মেলনকে ঘিরে দেশবাসী বিপুলভাবে আলোড়িত হয়ে উঠছে।
দুই
বিগত ৬৭ বছরে দলটির ১৯টি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দলটির সম্মেলন প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হওয়ার গঠনতান্ত্রিক বিধান ছিল। প্রতিষ্ঠার পরের বছর ১৯৫০ সালে মুদ্রিত গঠনতন্ত্র থেকে জানা যায়, প্রতিবছর জেলা থেকে নির্বাচিত ১ হাজার ৪৩ জন কাউন্সিলর নিয়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান চালু ছিল। পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালের ২১ থেকে ২৩ অক্টোবর কাউন্সিল অধিবেশনে গৃহীত গঠনতন্ত্রে দুই বছর পরপর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান চালু হয়। এখন গঠনতন্ত্রে তিন বছর পরপর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান চালু হয়েছে। ইতিহাসের গভীরে গিয়ে প্রাণরস আহরণের জন্য ২০তম সম্মেলন অনুষ্ঠানের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে আওয়ামী লীগের নেতা-সদস্য-কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী ও জনগণকে আজ স্মরণে আনতে হবে অতীতে কোন পরিবেশে কবে কোথায় কোন কর্তব্য সাধনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সম্মেলনগুলো জাতি ও জনগণের জীবনে কোন তাৎপর্য বয়ে এনেছে। এ বিষয়টি অনুধাবনের জন্য বিগত সময়ের ১৯টি কাউন্সিল ও ২টি বিশেষ কাউন্সিল তথা সম্মেলনের তালিকা নিম্নে প্রদান করা হলো।
* প্রতিষ্ঠা সম্মেলন : ২৩ ও ২৪ জুন, ১৯৪৯; ঢাকা, রোজ গার্ডেন। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীতে তিনি হন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।
* দ্বিতীয় সম্মেলন : ১৪-১৬ নভেম্বর, ১৯৫৩; ঢাকা, মুকুল সিনেমা হল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
* তৃতীয় সম্মেলন : ২১-২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৫; ঢাকা, রূপমহল সিনেমা হল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
* চতুর্থ সম্মেলন : ৭-৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭; কাগমারি, টাঙ্গাইল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
* বিশেষ সম্মেলন : ১৩-১৪ জুন, ১৯৫৭; ঢাকা, শাবিস্তান সিনেমা হল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীতে সভাপতি পদত্যাগ করে ন্যাপ গঠন করলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ।
* পঞ্চম সম্মেলন : ৬-৮ মার্চ, ১৯৬৪; ঢাকা, ইডেন হোটেল। সভাপতি মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
* ষষ্ঠ সম্মেলন : ১৮-২০ মার্চ, ১৯৬৬। ঢাকা, হোটেল ইডেন। সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ।
* সপ্তম সম্মেলন : ১৯ আগস্ট, ১৯৬৭; ঢাকা, পুরানা পল্টন আওয়ামী লীগ অফিস। সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ।
* অষ্টম সম্মেলন : ৪ জুন, ১৯৭০; ঢাকা, হোটেল ইডেন। সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ।
* নবম সম্মেলন : ৭-৮ এপ্রিল, ১৯৭২; ঢাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
* দশম সম্মেলন : ১৮-২০ জানুয়ারি, ১৯৭৪; ঢাকা। সভাপতি এএইচএম কামারুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
* ১১তম সম্মেলন : ৩-৪ এপ্রিল, ১৯৭৭; ঢাকা, ইডেন হোটেল। আহ্বায়ক সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন। তবে, এর অগে ১৯৭৬ সালে দল পুনরুজ্জীবনের পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মহিউদ্দিন আহমেদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেন।
* ১২তম সম্মেলন : ৩-৫ মার্চ, ১৯৭৮; ঢাকা, সভাপতি আবদুল মালেক উকিল ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক।
বিশেষ সম্মেলন : ২৩-২৪ নভেম্বর; ১৯৭৮; ঢাকা।
* ১৩তম সম্মেলন : ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১; ঢাকা, হোটেল ইডেন। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক। সাধারণ সম্পাদক অন্য দল গঠন করে বহিষ্কৃত হলে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন।
* ১৪তম সম্মেলন : ১-৩ জানুয়ারি, ১৯৮৭; ঢাকা, সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
* ১৫তম সম্মেলন : ১৯, ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৯২; ঢাকা, সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
* ১৬তম সম্মেলন : ৬-৭ মে, ১৯৯৭; ঢাকা, সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
* বিশেষ কাউন্সিল : ২৩ জুন, ২০০০; ঢাকা।
* ১৭তম সম্মেলন : ২৬ ডিসেম্বর, ২০০২; ঢাকা। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল জলিল।
* ১৮তম সম্মেলন : ২৪ জুলাই ২০০৯; ঢাকা, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
* ১৯তম সম্মেলন : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১২; ঢাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।*
(* বিভিন্ন পুস্তক ও দলিল অনুসরণ করে তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারিখ বা সম্মেলন কত দিনের হয়েছে প্রভৃতি নানাভাবে লেখা রয়েছে, ঢাকায় কোথায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সুনির্দিষ্ট করে লেখকের জানার সীমাবদ্ধতার কারণে তা এখানে তুলে ধরা সম্ভব হয় নি। এই তালিকা সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে হয়। এ বিষয়ে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।)
উল্লিখিত তালিকা লক্ষ্য করলেই এটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে, দেশের ঐতিহ্যবাহী দলটি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অনেক সময়েই সময়মতো সম্মেলন অনুষ্ঠিত করতে পারে নি। এর কারণ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে সামরিক শাসনে রাজনীতি বন্ধ থাকা, দমনপীড়ন, আন্দোলন- সংগ্রাম, হত্যা-ক্যুয়ের মাধ্যমে দলকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রচেষ্টা প্রভৃতি সব অনিবার্য কারণে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারে নি। তবে যখনই আওয়ামী লীগ সময় ও সুযোগ পেয়েছে, তখনই সম্মেলন অনুষ্ঠিত করেছে। প্রয়োজনে বিশেষ কাউন্সিল করেছে। সম্মেলন যথাসময়ে করার বিষয়ে অন্য দলগুলোর তুলনায় আওয়ামী লীগ এগিয়ে আছে।
তিন
আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব কখনও এটা বিস্মৃত হয় নি যে, দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা, মতামতের ভিত্তিতে কর্মসূচি ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন, প্রবীণ-নবীন সমন্বয়ে যোগ্যতমদের নিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচন প্রভৃতি করার জন্য গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যথাসময়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত করা অপরিহার্য। প্রতিষ্ঠা সম্মেলন থেকে ১৯তম সম্মেলনগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে, প্রতিটি সম্মেলনই আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও সংগঠনের জন্য আর সেই সাথে দেশের জন্য অবদান রেখেছে। প্রতিটি সম্মেলনকেই মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা চলে। আর এমন একটি সম্মেলনও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে দেশ ও জনগণের আর সেই সাথে দলের প্রয়োজনে সম্মেলন কোনো পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয় নি। জন্মলগ্নের অঙ্গীকার অনুযায়ী লক্ষ্যের প্রতি অবিচল ও স্থির থেকে কৌশলে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সাহসী ও নমনীয় থাকার ঐতিহ্য বরাবরই আওয়ামী লীগ অনুসরণ করেছে।
দলটির সম্মেলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, ব্যক্তির চাইতে দল বড়, দলের চাইতে দেশ বড়Ñ এটা বিশেষ মুহূর্তে প্রয়োগ করতে আওয়ামী লীগের সম্মেলন ভুল করে নি। এ কারণেই জনগণ যেমন দলটির প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পেরেছে, তেমনি দলও কখনও জনগণের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস হারায় নি। এই পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসই আওয়ামী লীগের শক্তির প্রধানতম উৎস। জনগণের সাথে এই সংযোগ থাকার কারণেই দেখা যাবে যে, তৃণমূলে জনগণের নেতারাই হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সদস্য কর্মী ও নেতা। সম্মেলনগুলোর গৃহীত সিদ্ধান্ত কখনও তৃণমূলের সদস্য কর্মী ও নেতাদের চিন্তা-চেতনার বিপরীতধর্মী না হওয়ায় চরম দুর্দিনেও এরাই আওয়ামী লীগকে ত্যাগ-তিতিক্ষা ও শ্রম-মেধা দিয়ে টিকিয়ে রেখেছে।
সম্মেলনগুলো উল্লিখিত ভূমিকা রেখেছে বলেই প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখনও পর্যন্ত দেশের সর্ববৃহৎ দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সক্রিয় ও উজ্জীবিত থাকতে সক্ষম হয়েছে। উল্লিখিত কথাগুলো যে ইতিহাসের কষ্টিপাথরে সত্য এবং প্রতিটি সম্মেলন থেকে যে কিছু শেখার রয়েছে, তা বিবেচনার জন্য বিগত সম্মেলনগুলোর তাৎপর্য ও অর্জনের দিকে সংশ্লিষ্ট সবার ফিরে তাকাতে হবে। অর্জনের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই সংগ্রাম অব্যাহত রেখে নতুন নতুন অর্জন ছিনিয়ে আনতে হবে। নতুন তাৎপর্য অর্জনের জন্যই অতীতের তাৎপর্যকে করতে হবে মহিমান্বিত, নিতে হবে অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা। বর্তমানের চলার পথকে কণ্টকমুক্ত ও আলোকিত করার জন্যই অতীতের দিকে ফিরে তাকানো ভিন্ন বিকল্প নেই।
চার
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হওয়ার ২২ মাসের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন, দিক-নির্দেশহারা। পাকিস্তানি শাসক ও শোষকগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ, পূর্ব বাংলা-বিরোধী কার্যকলাপ, গণতন্ত্র ও শাসনতন্ত্র সম্পর্কে অনিহা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দুর্ভিক্ষাবস্থা প্রভৃতি নতুন রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্নসাধকে ধূলিস্যাৎ করে চলছিল। কোনো বিরোধী কথা বললেই ‘শির কুচাল দেঙ্গে’ কথাটা উচ্চারিত হতো। কেবল হুমকি নয়, শুরু হয়ে গিয়েছিল দমন-পীড়নও। তখনকার ছাত্রনেতা শেখ মুজিব ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পক্ষে সংগ্রাম পরিচালনা করতে গিয়ে জেলে ছিলেন। এই দুঃসহ অবস্থায় গণতন্ত্র ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দমন-পীড়ন প্রতিহত করার জন্য মুসলিম লীগ বিরোধী একটি বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তা জনগণ প্রত্যাশা করছিল।
এই অবস্থায় প্রায় ৩০০ প্রতিনিধি নিয়ে সম্মেলনের ভেতর দিয়ে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠা পায়। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এই দল গঠন অতুল ও প্রধান ভূমিকা পালন করে। ইতিহাস প্রমাণ করেছে ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন প্রতিষ্ঠার তারিখ দুটো ছিল পূর্ব বাংলার জনগণের জন্য মহেন্দ্রক্ষণ। পাকিস্তানি মতাদর্শ দ্বি-জাতিতত্ত্ব ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা এই মানচিত্রের জনগণের আবহমান থেকে চলে আসা গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদ ও দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চলমান ধারা থেকে বিচ্ছেদ ঘটিয়েছিল, এই সম্মেলনের ভেতর দিয়ে শুরু হয় ছিন্ন হয়ে যাওয়া ওই ধারার সাথে সংযোগ প্রতিষ্ঠার আয়োজন। এই আয়োজন যে স্বার্থক ও সফল হয়েছিল, ইতিহাসই তা স্বাক্ষর রেখেছে। সকালই বলে দেয় দিনটা কেমন যাবে প্রবাদের সত্যতা প্রমাণ করে রোজ গার্ডেনের সম্মেলন প্রকৃত অর্থেই বাংলার মাটিতে গোলাপ ফুটিয়ে চলছে।
দ্বিতীয় সম্মেলন ছিল বাহান্নর ভাষা আন্দালনের পটভূমিতে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন সামনে রেখে। তরুণ শেখ মুজিব তখন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। ৩০০ কাউন্সিলর নিয়ে ১৪-১৬ নভেম্বর ১৯৫৩ অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ-বিরোধী যুক্তফ্রন্ট গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ২১-দফা কর্মসূচির খসড়া চূড়ান্ত হয়। এই দুই সিদ্ধান্ত যে কতটা তৎপর্যম-িত ও যুগান্ত সৃষ্টিকারী ছিল, তা ইতিহাস স্বাক্ষর রেখেছে। তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২১-২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৫, পাকিস্তানি শাসক-শোষক গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও ৯২(ক) ধারা জারি, যুক্তফ্রন্ট ভেঙে যাওয়া, পূর্ব বাংলার আইন সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের বিরোধী দলে অবস্থান নেওয়ার প্রেক্ষাপটে। এই সময়ে আওয়ামী লীগ পর্যুদস্ত অবস্থার মধ্যে ছিল। এই সম্মেলনের অতীব তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ বাদ দেওয়া। চতুর্থ সম্মেলন ৮৯৬ প্রতিনিধির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় ৭-৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৭, টাঙ্গাইলের কাগমারিতে। তখন কেন্দ্রে ও প্রদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। চরম দলাদলির মধ্যে এই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় যে, দলের কোনো নেতা একই সাথে দলের কর্মকর্তা ও মন্ত্রিপদে থাকতে পারবেন না। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে শেখ মুজিব স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন। তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকেই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। ব্যক্তির চাইতে দল বড়, দলের চাইতে দেশ বড়Ñ এটা প্রমাণ করে শেখ মুজিব মন্ত্রিপদ থেকে পদত্যাগ করেন।
ওই সম্মেলনের চার মাস পরে ১৩-১৪ জুন ১৯৫৭, অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ সম্মেলন। এই সম্মেলনে দলের ভাঙন অনিবার্য হয়। মওলানা ভাসানী গঠন করেন ন্যাপ। এই সম্মেলনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে যুক্ত নির্বাচন প্রথার পক্ষে দৃঢ় থেকে সংবিধান প্রণয়ন ও নির্বাচনের পক্ষে জোর অবস্থান গ্রহণ করেন। ফলে ক্ষমতায় থাকতে পারে না। পাকিস্তানের ক্ষমতায় থেকে তিক্ত অভিজ্ঞতা লাভ এই সম্মেলনকে তাৎপর্যময় করে রেখেছে। ৬-৮ মার্চ ১৯৬৪, অনুষ্ঠিত পঞ্চম সম্মেলন ছিল সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন ও প্রত্যাহার, আইয়ুব মোনায়েমের দমন-পীড়নের শাসন, রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দল গঠন না করে এনডিএফে থাকার অভিজ্ঞতা, দলীয় নেতা সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু প্রভৃতি সামনে নিয়ে। ১ হাজার কাউন্সিলর নিয়ে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের তাৎপর্যপূর্ণ দিক হচ্ছে প্রবীণ নেতারা এনডিএফে থেকে কাজ করতে মরিয়া থাকলেও শেখ মুজিবের নেতৃত্বে দলকে পুনরুজ্জীবিত করা।
এই সম্মেলন থেকেই শুরু হয় শেখ মুজিবের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে গড়ে ওঠার পথ-পরিক্রমা। ষষ্ঠ সম্মেলন ১ হাজার ৪৪৩ কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে ১৮-২০ মার্চ ১৯৬৬ অনুষ্ঠিত হয় পাক-ভারত যুদ্ধ ও শেখ মুজিবের ৬-দফা ঘোষণার পটভূমিতে। কাউন্সিল ৬-দফা গ্রহণ করবে না এটাই ছিল জোর প্রচার। কিন্তু দলীয় কাউন্সিলরা তা মিথ্যা প্রমাণ করে বাঁচার দাবি ৬-দফার পক্ষে সক্রিয় সমর্থন ঘোষণা করে। এই সম্মেলনের সবচেয়ে বড় তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো শেখ মুজিবুর রহমানকে সভাপতি এবং তার সহযোগীদের কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটিতে নির্বাচন। এই মাইলফলক অতিক্রমের পর আওয়ামী লীগের আর পিছুটান ছিল না।
সপ্তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯ আগস্ট ১৯৬৭, আগরতলা মামলার মধ্যে পিডিএমপন্থিদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে কঠিন এক পরিস্থিতির মধ্যে। নেতৃবৃন্দের জেলে থাকা অবস্থায় গ্রেফতার এড়িয়ে ১৮০ কাউন্সিলর উপস্থিত ছিল। বিরোধিতার মধ্যেও এই সম্মেলনে ৬-দফার পক্ষে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল তাৎপর্যম-িত। অষ্টম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ৪ জুন ১৯৭০। গণ-অভ্যুত্থান, আগরতলা মামলা প্রত্যাহার, আইয়ুবের পতন ও নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজয়ী এক পরিবেশের মধ্যে। ১ হাজার ১৩৮ কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে সম্মেলন ৬-দফা ও ১১-দফা গ্রহণ করে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে সত্তরের নির্বাচনে যাওয়ার ভিত সৃষ্টি করে তাৎপর্যমণ্ডিত হয়ে আছে। এটাই ছিল পাকিস্তান নামক কৃত্রিম রাষ্ট্রে আওয়ামী লীগের শেষ সম্মেলন।
পাঁচ
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী দল আওয়ামী লীগের স্বাধীন দেশে প্রথম সম্মেলন হলো নবম সম্মেলন। যুদ্ধবিধস্ত দেশের পুনর্গঠন, পুনর্বাসন, নতুনভাবে সব গড়ে তোলাসহ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের প্রত্যয় নিয়ে ৭-৮ এপ্রিল ১৯৭২, এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন জাতীয় চার মূলনীতির ভিত্তিতে সংবিধান রচনার ভিত সৃষ্টি করে। আওয়ামী লীগের দশম সম্মেলন হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবনের শেষ সম্মেলন। ১৮-২০ জানুয়ারি ১৯৭৪, অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে নীতি-নির্ধারণী সুদীর্ঘ ভাষণের পর সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করে তিনি গণতান্ত্রিক চর্চা ও সংস্কৃতির নতুন দিগন্ত প্রসারিত করেন। ব্যক্তির চাইতে দল বড়, দলের চাইতে দেশ বড় এটা জীবনে বারবার প্রমাণ করে আমাদের জাতির পিতা এই সম্মেলনকে মাইলফলক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার অনুপস্থিতি, হত্যা-ক্যুয়ের রাজনীতি, প্রত্যক্ষ সামরিক কর্তার শাসন, দল ভাঙাভাঙিসহ নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত এবং অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে প্রায় নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় ৩-৪ এপ্রিল ১৯৭৭, অনুষ্ঠিত হয় একাদশ সম্মেলন। পাকিস্তানের মুসলিম লীগের দশা হবে আওয়ামী লীগের মতো অর্থাৎ, দলটি হবে ছত্রখান ও নিশ্চিহ্ন এই প্রচারের মধ্যে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় ঐক্য রক্ষা করা, পদ দখলের চক্রান্ত প্রতিহত করা এবং তৃণমূলে দলকে পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে এই সম্মেলনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ভেতর দিয়ে এই সম্মেলন সমাপ্ত হয়।
দ্বাদশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ৩-৫ মার্চ ১৯৭৮। পরোক্ষ সামরিক কর্তা জিয়ার দুঃসহ অন্ধকারাচ্ছন্ন শাসনের মধ্যে। এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের শূন্যতার অভাব অনুভূত এবং অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকট হতে থাকলেও তৃণমূলে দল গুছিয়ে উঠতে এই সম্মেলন সাহায্য করে। মাত্র আট মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত হয় জিয়ার তথাকথিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর এবং সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের বিশেষ সম্মেলন। এই সম্মেলন ১১-দফার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। দেশের অস্থিতিশীল ও নাজুক অবস্থায় উল্লিখিত সম্মেলন ৩টি ছিল মার্কটাইম করার অর্থে সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
ছয়
১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১, অনুষ্ঠিত ত্রয়োদশ সম্মেলন আওয়ামী লীগ আর সেই সাথে দেশের ইতিহাসের এক বিশেষ মাইলফলক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রবাসে অবস্থানরত জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনাকে এই সম্মেলন সভাপতি নির্বাচিত করে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার তথা ভোট ও ভাতের রাজনীতিতে সূচিত হয় নতুন এক অধ্যায়। এই সম্মেলনের পর সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার ১৩ দিনের মাথায় প্রেসিডেন্ট জিয়া নিহত হলে আবারও দেশে এক অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত অবস্থা সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ক্যুয়ের ভেতর দিয়ে এরশাদ ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের কবলে পড়ে। আওয়ামী লীগের নাম নিয়ে ব্যাকেট দিয়ে দল গঠনের চক্রান্ত শুরু হয়। এত কিছুর মধ্যেও দলটি ভাঙনের মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। এরই মধ্যে চলতে থাকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ১৫ দলের আন্দোলন। ফলে চতুর্দশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে বিলম্ব হয়। তবে আন্দোলন-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে বঙ্গবন্ধু-কন্যার সুযোগ্য নেতৃত্বে দল রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে উঠতে থাকে।
এই অবস্থায় ১ থেকে ৩ জানুয়ারি ১৯৮৭, অনুষ্ঠিত হয় চতুর্দশ সম্মেলন। এই সম্মেলনের ভেতর দিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে আরও গুছিয়ে ওঠে। ইতোমধ্যে স্বৈরাচারী এরশাদের পতন ও বিশ্ব পরিস্থিতিতে পরিবর্তন সূচিত হয়। ’৯১-এর সূক্ষ্ম কারচুপির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অনমনীয় দৃঢ়তা ও আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দেশ আবারও সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারায় ফিরে আসে। এ অবস্থায় ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৯২, অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চদশ সম্মেলন। বিশ্ব ও জাতীয় পরিস্থিতির পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে নতুন অর্থনৈতিক নীতিমালার আলোকে ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র সংশোধন করা ছিল এই সম্মেলনের তাৎপর্যপূর্ণ অবদান। আওয়ামী লীগ আবার প্রমাণ করে লক্ষ্য ও নীতির প্রতি অবিচল থেকে সঠিক সময়ে কৌশলে পরিবর্তিত হওয়া দলটির জন্য স্বাভাবিক বিষয়। সম্মেলনের পর যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে গণসংগ্রাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গণ-আন্দোলন প্রভৃতির কারণে ষষ্ঠদশ সম্মেলন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত করা সম্ভব হয় না।
গণসংগ্রামে বিজয়ের প্রেক্ষাপটে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সুদীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এলে ৬ ও ৭ মে ১৯৯৭, ষষ্ঠদশ সম্মেলনে মিলিত হয়। সুদীর্ঘ বছর পর ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন দেশকে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যাভিমুখী পথে ঘুরে দাঁড়াতে যথার্থ ভূমিকা রাখে। পরবর্তীতে তিন বছর সময় অতিক্রান্ত হলে নির্বাচন সামনে থাকায় সম্মেলন অনুষ্ঠান করা সম্ভব না হলেও বিশেষ সম্মেলন ২৩ জুন ২০০০ অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন গণতন্ত্র উন্নয়ন ও মুুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় দেশকে অগ্রসর করার ক্ষেত্রে প্রভূত ভূমিকা পালন করে। এই সম্মেলনের পর ২০০১ সালে ভোট ডাকাতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পরাজিত হতে বাধ্য করা হলে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা ও নিশ্চিহ্ন করতে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়।
এই পরিস্থিতি রুখে দাঁড়ানোর ভেতর দিয়ে ২৬ ডিসেম্বর ২০০২, সপ্তদশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন দলকে উজ্জীবিত রাখতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইতোমধ্যে বিএনপি-জামাতের দুঃশাসন চরমে পৌঁছে। এদিকে বিএনপি-জামাত জোট ২০০৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী ও কুক্ষিগত করতে চাইলে শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। ফলে যথাসময়ে সম্মেলন করা সম্ভব হয় না। পরবর্তীতে আসে এক-এগারোর জরুরি আইনের সরকার। রাজনীতি থাকে নিষিদ্ধ। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে প্রথমে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসতে বাধা দেওয়া হয়। পরে নেত্রীকে কাটাতে হয় বন্দী জীবন। কিন্তু এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠলে সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। নির্বাচনে সভানেত্রী শেখ হাসিনা দিনবদলের কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে।
জনগণের ভোটে ক্ষমতাসীন হয়ে আওয়ামী লীগ ২৪ জুলাই ২০০৯, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে অষ্টাদশ সম্মেলন অনুষ্ঠান করে। এই সম্মেলন দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক মাইলফলক বিশেষ। এই সম্মেলনে দেশের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে নতুন ঘোষণাপত্র গ্রহণ এবং গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে দৃঢ় প্রত্যয় এই সম্মেলনকে তাৎপর্যম-িত করে তোলে। সরকার পরিচালনায় সাফল্য এবং দেশ ও জনগণের অব্যাহত উন্নতি ও অগ্রগতির প্রেক্ষাপটে ঊনবিংশতম সম্মেলন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৮ ডিসেম্বর ২০১২ অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নতি ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে এবং দেশকে অস্থিতিশীল ও সংবিধান বহির্ভূত পথে ঠেলে দেওয়ার লক্ষ্যে বিএনপি-জামাত জোটের যুদ্ধংদেহী কার্যকলাপ ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইতোমধ্যে তিন বছর সময় অতিক্রান্ত হলেও মূলত ইউনিয়ন কাউন্সিল নির্বাচনের কারণে সম্মেলন পিছানো হয়। এখন আওয়ামী লীগ ২০তম সম্মেলনের দোরগোড়ায়।
সাত
এমন একসময়ে আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিল অধিবেশন হতে যাচ্ছে, যখন জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে দলটি সাত বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থেকে প্রদত্ত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের ভেতর দিয়ে দেশ, জাতি ও জনগণের সেবা করে যাচ্ছে। বিশ্বের বুকে গর্বিত জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো এবং জনগণের জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়নে আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার আজ দেশে-বিদেশে সর্বত্র প্রশংসিত। দেশি-বিদেশি পরাজিত শক্তির সৃষ্ট বাধা-বিপত্তি এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাঁয়তারার মধ্যেও দেশবাসী আজ জাতির পিতা ও লক্ষ লক্ষ শহীদের স্বপ্নসাধ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে দেশকে জন্মলগ্নের লক্ষাভিমুখী পরিচালনা করার কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত। সরকারের সৃজনশীল প্রয়াস ও কর্মোদ্যোগের সাথে দেশবাসীর ইচ্ছে-আকাক্সক্ষা প্রত্যাশা ও কর্মউদ্দীপনা একই খাতে প্রবাহিত হওয়ায় নতুন এক বাংলাদেশ ক্রমেই দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।
এই বাংলাদেশ শহীদের রক্তস্নাত স্বপ্নের সোনার বাংলা। বর্তমান সময়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ। একবিংশ শতকের বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ গড়ে তোলার সাথে সম্পূর্ণ সংগতিপূর্ণ হয়ে ওঠার দাবি নিয়েই দেশের গৌবরম-িত জনগণের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। অতীতে কখনও আওয়ামী লীগের সম্মেলন যেমন যথাযথ রাজনৈতিক সাংগঠনিক কর্মপন্থা গ্রহণে ভুল করে নি; তেমনি এবারেও সঠিক ও যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেই এগিয়ে যাবে। জনগণের সব শক্তি ঐক্যবদ্ধ ও কার্যকর করতে দলের সব নেতা-কর্মী-সদস্যদের সচেতন সক্রিয় ও উদ্যোগী করা; শ্রম ও মেধা, ত্যাগ ও কার্যকারিতা এবং নবীন ও প্রবীণদের সম্মিলন ঘটিয়ে কেন্দ্রে যথাযথ নেতৃত্ব গড়ে তোলা প্রভৃতি অতীতে, যা আওয়ামী লীগের সম্মেলনগুলো করে গণচেতনা ও গণসংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছে; এবারেও তা করবে বলেই জনগণ দৃঢ়ভাবে মনে করে।
এটা তো ঠিক যে, আওয়ামী লীগ মানুষের চেতনা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ ও অঙ্গীকার করার ফলেই মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে ক্ষমতায় এসে দেশ সেবার সুযোগ পেয়েছে। সময় শেষে দলকেই আবার জনগণের কাছে জনতার রায়ের জন্য যেতে হবে। সরকার নয়, দলকেই দাঁড়াতে হবে জনগণের সামনে। মানুষ সরকারকে নয় ভোট দেবে দলকে, দলীয় প্রার্থীকে। এই দিক বিবেচনায় যতই আগামী নির্বাচন সামনে আসছে, ততই দলের আর সেই সাথে কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত দলীয় নেতা-কর্মী-সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বেড়ে যাচ্ছে। এই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের উপযোগী সংগঠন হিসেবে এই সম্মেলনের ভেতর দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চেতনা শাণিত করে নব উদ্যম নিয়ে বের হয়ে আসবে এবং অতীত সম্মেলনগুলোর ঐতিহ্যের ধারাকে অগ্রসর করে নেবে এটাই বর্তমানে জনগণের একান্ত প্রত্যাশা।
মূল প্রবন্ধঃ শেখর দত্ত, উত্তরন নিউজ

শেখ হাসিনা একজন ক্যারিশম্যাটিক মিসরের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত

শেখ হাসিনা একজন ক্যারিশম্যাটিক 

মিসরের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মাহমুদ ইজ্জত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কারিশম্যাটিক লিডার আখ্যায়িত করে বলেছেন, তাঁর প্রতি বাংলাদেশের জনগণের অকুন্ঠ সমর্থন ও আস্থা রয়েছে।
রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর জাতীয় সংসদ ভবনের কার্যালয়ে বিদায়ী সাক্ষাৎকালে মিসরের রাষ্ট্রদূত একথা বলেন।
বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বৈঠক সম্পর্কে অবহিত করেন।
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের চমকপ্রদ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রসংশা করে বলেন, এই উন্নতির জন্যই বাংলাদেশ বর্তমানে এশিয়ান টাইগার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের জন্যই বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে এশিয়ান টাইগার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং মিসর বাংলাদেশের এই অর্জন থেকে শিক্ষা লাভ করতে চায়।
বাংলাদেশের ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ হারে জিডিপি অর্জনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মিসরের রাষ্ট্রদূত একে বিস্ময়কর সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের জনগণকে শান্তিপ্রিয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও তিনি অভিভূত।
মাহমুদ ইজ্জত বাংলাদেশের মানুষের সহনশীলতার ও ভূয়শী প্রশংসা করেন।
সম্প্রতি মিশরের একটি এয়ার ক্রাফট ভূমধ্য সাগরে বিধ্বস্থ হবার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিশরের প্রেসিডেন্টকে শোকবার্তা পাঠানোর জন্যও তিনি প্রধানমন্ত্রকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বিগত প্রায় সাড়ে ৭ বছর সময়ে তার সরকারের সাফল্য এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুল ধরে বলেন, সরকার এই সময়ের মধ্যে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালীকরণের পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়ননীতির সাহায্যে মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন সাধন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরে বলেন, বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটিয়ে দেশকে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত, প্রযুক্তি নির্ভর,শান্তিপূর্ণ ২১ শতকের আধুনিক দেশ হিসেবে গড়েই তোলাই তাঁর লক্ষ্য ।
তিনি ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী সীমাহীন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এই অশুভ শক্তির উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করা। দেশের সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যার প্রসংগ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, সরকার অচিরেই দেশের জনগণের সঙ্গে মিলে এই গুপ্তহত্যা বন্ধে সক্ষম হবে।
প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসেবা খাতে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদানসহ ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।
একইসঙ্গে তিনি জনগণের জন্য সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচি এবং খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিও তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় আরও বলেন, তিনি বিরোধী দলে থাকাকালিনই দেশের আর্থ-সামাজিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরিকল্পনা করেছিলেন এবং প্রকল্প কিভাবে বাস্তবায়িত হবে তা ভেবে রেখেছিলেন।
বাংলাদেশ এবং মিশরের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক বলবৎ থাকার প্রসংগ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলেই এই সম্পর্কের ভীত রচিত হয়।
তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মিশর সফরের কথাও স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালনকালিন সময়ে সরকারের প্রতি সহযোহিতার জন্য তাঁকে (মাহমুদ ইজ্জত) ধন্যবাদ জানান। তিনি ডিপ্লোমেটিক কোরের ডিন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগমও উপস্থিত ছিলেন।

Tuesday, June 7, 2016

নস্টদের দখলে তিলে তিলে গড়ে তোলা কালকিনি উপজেলা আ'লীগ!

নস্টদের দখলে তিলে তিলে গড়ে তোলা কালকিনি উপজেলা আ'লীগ!

যেখানে দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষনা করেছেন নৌকার বিরুদ্ধে যারা ইলেকশন করবে তারা যদি জিতেও যান তাদের কখনো আ'লীগে নেয়া হবে না। সেখানে কালকিনিতে ঘটতেছে সম্পুর্ন ব্যাতিক্রম। এখানে নৌকা ডুবানোরা হয় পুরস্কৃত। এখানে যারা নৌকায় ভোট দিয়েছে তাদের ঘরবাড়ি হয় লুটপাট। মামলা হামলায় তারা হয় পলাতক। ক্ষমতার উচ্চ পদ থেকে নৌকার সমর্থকদের হয়রানি করা হচ্ছে অনবরত। আমার প্রানপ্রিয় আওয়ামী সমর্থকদের নামের মামলা তুলে নেয়া হয়নি। তাদের শতশত জালাও পোড়াও ও লুটপাট করা ঘরবাড়ি ঠিক করে দেয়া হয়নি। আমার ভাইদের বাড়িতে ফিড়িয়ে আনার উদ্যগ নেয়া হয়নি। এখনো প্রতিনিয়ত তাদের উপর চলছে নির্মম নির্যাতন। কাঁদছে আলীনগরবাসি, কান্নার আহাজারি চলছে লক্ষীপুরে, জলছে কয়ারিয়া। সাহেবরামপুর, সিডিখানসহ কি চলছে সারা কালকিনিতে একবার দেখে আসুন ছদ্দবেশে।

এই অবস্থার মধ্যই এমপি মহোদয় আ'লীগের শত্রু, নৌকার শত্রুদের সাথে নিয়ে সভা সমাবেশ ও মহরা দিয়ে চলেছেন। এতে করে কালকিনি উপজেলা আ'লীগের সকল সাধারন আরো লজ্জিত, ভীত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাদের সকলের জিজ্ঞাসা আ'লীগ করাই আ্মাদের বড় অপরাধ হয়ে গেল? যারা আ'লীগের শত্রু তারা জুলুম করে আমাদের উপরে আর তারাই আবার এমপির সাথে থাকে তাহলে আমরা কোথায় যাব। দলের মধ্য থেকে যারা নৌকার বিরুদ্ধে ইলেকশন করলো তাদের বহিস্কার করা হলো না কিন্তু যারা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন দিয়েছে তাদের বহিস্কার করা হলো।

ইউনিয়ন ইলেকশনে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে চুপ, যারা উপজেলা আ'লীগের দায়িত্বে থেকেও নৌকা ডুবালো তাদের ব্যাপারেও এমপি সাহেব চুপ অথচো পৌরসভার সময় আমরা এমপি সাহেবের কি রুপ দেখেছিলাম। ইউপিতে যদি মনে করেন সবাই আ'লীগ তাহলে পৌরসভাতে কেন মাস্তানী করলেন? কি দোষ করেছিল কালাম ভাই, জীবন দিয়ে আ'লীগ করা লোকমানের কি অপরাধ ছিল, আ'লীগের জন্য জীবনের সবকিছু বিষর্যন দেয়া সবুজ কি পাপ করেছিল? আপনার এত মাস্তানির পরও এরা এক একজন কত ভোট পেয়েছিল একটু হিসেব করে নিয়েন! যদি মাস্তানি না করতেন তাহলে আপনার অবৈধ নৌকা কোথায় ভেষে যেত তার ঠিকানা খুজে পেতেন না।

উপজেলা ও পৌরসভা আ'লীগের সম্মিলিত মনোনয়ন বোর্ড এবং আ'লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সকলের সমর্থনে কালাম ভাইকে মনোনয়ন দিয়ে কেন্দ্রে রেজুলেশন পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আপনি একা আপনার ক্ষমতা দিয়ে সবার মতামতকেই জলাঞ্জলি দিলেন। আপনার খামখেয়ালিপনার কারনে কালকিনি আ'লীগ ও তার অংগ সংগঠনের সবাই একযোগে পদত্যাগ করেছিল কিন্তু কাউকেই আপনি সামান্য তোয়াক্কা করলেন না। লোভ লালসা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অনেককেই বাগিয়ে নিলেন কিন্তু কতটা পেরেছেন, হিসেব মিলিয়ে দেইখেন। জুলুম, নির্যাতন ও মাস্তানির স্টীম রোলার চাপিয়ে দিলেন কালকিনির উপরে।

সম্পুর্ন অন্যায় ও নিয়মবহির্ভুতভাবে ইলেকশন চলাকালিন সময়েই বিদ্র্রোহীকে সমর্থন প্রদানের জন্য বহিস্কার করা হলো কিন্তু এখনতো অনেকদিন হয়ে গেল ইলেকশন শেষ। কই এখনতো তাদের বহিস্কার করছেন না বরং তাদের নিয়ে ঘুড়ছেন, খাইছেন, আনন্দ করছেন। এমন ডবল রোল আ'লীগের সাথে কেন? আ'লীগকে এত ভয় কেন? কেমন আজব চরিত্রের নেতা হলে এমনটা সম্ভব? বিএনপি জামায়ত দিয়ে যদি আ'লীগ করাতে চান তাহলে শরীর থেকে প্রথমে আ'লীগ নামটি মুছে ফেলুন।

শূন্য থেকে শুরু করে আজ কালকিনিতে সাজানো আ'লীগ। এই সাজানো বাগান ধংশ হতে দিতে পারিনা, দেব না। দলের জন্য অনেক রক্ত দিয়েছে আমার ভায়েরা। বিএনপিকে পাশে নিয়ে সেই ভাইদের রক্ত আবারো ঝরানো হচ্ছে। আমরা এটা মেনে নেব না। কালকিনির জনগন এটা হতে দেবে না। কালকিনির জনগন প্রস্তুত থাকুন। কোনো রক্ত চক্ষুকে ভয় পাবেন না। আমাদের কালকিনি, আমাদের আ'লীগ, আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। জয় আমাদেরই হবে। 
জয় বাংলা

Monday, June 6, 2016

আমরা শিক্ষিত পরিচ্ছন্ন নেতা এবং একটি স্বচ্ছ পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ চাই

আমরা শিক্ষিত পরিচ্ছন্ন নেতা এবং একটি স্বচ্ছ পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ চাই 


Saturday, May 7, 2016

আমি বেঁচে থাকতে এদেশকে নিয়ে কাউকে খেলতে দেবো নাঃ শেখ হাসিনা

আমি বেঁচে থাকতে এদেশকে নিয়ে কাউকে খেলতে দেবো না
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এদেশে কোন জঙ্গি সন্ত্রাসের স্থান নেই। এদেশের মাটি ব্যবহার করে কাউকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘অনেকে জঙ্গি সন্ত্রাসের ধোয়া তুলে এদেশকে নিয়ে খেলার চেষ্টা করবে। কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে এদেশকে নিয়ে কাউকে খেলতে দেবো না।’ প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদে ১০ম সংসদের ১০ম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে এদেশ জঙ্গি সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য ছিল। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রই হচ্ছে বিএনপির রাজনীতির মূলমন্ত্র। খবর বাসস’র।

ঘুষ-দুর্নীতিতে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার দুই পুত্র চ্যাম্পিয়ন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল এবং মানুষকে শোষণ করাই ছিল বিএনপি আমলের চিত্র।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিল তখন তিনি কালো টাকা সাদা করেছেন। রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকে তাদের পরিবার শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছে। বাংলাদেশ ওই সময় বিশ্বসভায় দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ছিল। এটাই ছিল বাংলাদেশের পরিচয়। আমরা ক্ষমতায় আসার পর সেই পরিচয় থেকে বেরিয়ে এসে আজকের বাংলাদেশ হচ্ছে উন্নয়নের রোল মডেল। বিএনপি নেত্রীর দুই ছেলেই দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। তাদের মানি লন্ডারিং সিঙ্গাপুরের আদালতে প্রমাণিত। এফবিআই-এর লোক এসে এখানে সাক্ষী দিয়ে গেছেন। বেগম খালেদা জিয়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে টাকা এনে এতিমের টাকা লুটপাট করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এক তার বার্তায় বিএনপি নেত্রীর বড় ছেলে সিমেন্সসহ বিভিন্ন কোম্পানি থেকে ঘুষ নিয়েছিল তার উল্লেখ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে একটি মামলা হয়েছে। সেখানে সিমেন্স কোম্পানি থেকে যে ঘুষ নিয়েছে সেটা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টে প্রমাণ হয়েছে এবং বিভিন্ন কোম্পানি থেকে তার ছেলে কত ডলার ঘুষ নিয়েছে এটাও উল্লেখ রয়েছে। এই টাকা সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকে বিএনপি নেত্রীর ছেলের বন্ধুর নামে রাখা হয়েছে এবং সেখানে সে ধরা পড়েছে ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করতে গিয়ে। এমনকি একটি হত্যা মামলা ঘুষ নিয়েছিল তার ছেলে। এটি তাদের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী স্বীকার করেছে। এসব দুর্নীতির মাধ্যমে যাদের সম্পদ ছিল ছেড়া গেঞ্জি আর ভাঙ্গা সুটকেস তারা শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা নিজেরা মানি লন্ডারিং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তারা এতো টাকা ঘুষ খেয়েছে যে আমেরিকার এফবিআই’র অফিসারকে পর্যন্ত টাকা দিয়ে কিনে ফেলেছে। এফবিআই’র অফিসারকে কিনতে গিয়ে বিএনপির এক নেতা আমেরিকাতে আটক হয়েছে। সেখানে তার বিচার হয়েছে। ওই বিচার কার্যক্রমে বিএনপি নেত্রীর উপদেষ্টা শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তারা সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়টি ওঠে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী জয় সম্পর্কে সম্প্রতি একটি মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন। জয় এ বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করেছে। বিএনপি নেত্রীকে আমি সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এবং শেখ রেহানা আমাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়েছি। চোর-চোট্টা বানাইনি। ২১ আগস্ট আমাকে হত্যায় ব্যর্থ হয়ে এখন আমার ছেলেকে হত্যার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’
তিনি বলেন, রাজনীতি জনগণের কল্যাণে এবং জনগণের জন্য। দেশের মানুষের কল্যাণে ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৮ সালের পর ক্ষমতায় এসে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। রিজার্ভ ২৯ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগের উপরে অর্জিত হয়েছে। দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬১-এ নেমে এসেছে। জনগণের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৪৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমা থেকে উঠে এসে নিম্ন মধ্য আয়ে পৌঁছেছে। ৭ বছরে ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৭০৮ জনের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। রফতানি আয় বেড়ে ৩২ দশমিক ২ ডলারে উন্নীত হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এতে মা ও শিশু মৃত্যু হার কমেছে। গণমুখী স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে শিক্ষার হার ৭১ ভাগে উন্নীত হয়েছে। মানুষের দোরগোড়ায় শিক্ষা পৌঁছে দিতে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হচ্ছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত মেধাবৃত্তি ও উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমাতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলা এবং কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। 
শেখ হাসিনা বলেন, ১০৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে ১৪ হাজার ৭শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। দেশের ৭৬ ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।

Thursday, March 10, 2016

গনতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক।





গনতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনটি এ দেশের সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ও গনতন্ত্রের যাত্রাকে অব্যাহত রাখতে একটি গুরত্বপূর্ণ এবং অন্যান্য মাইলফলক। বাংলাদেশের জনগন দেশের স্বার্থে সবসময়ই অত্যন্ত সক্রিয়।চলমান উন্নয়ন পক্রিয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রয়োজন জনগনের সক্রিয় অংশগ্রহন,সহযোগিতা এবং যথাযথ সমন্বিত উদ্যেগ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যেগের কারনে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশ মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলসমূহ অর্জনে সাফল্য দেখিয়েছে এবং জাতীয় আয় ও বাজেটে বরাদ্দ উল্লেখ্যযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের উত্তরন ঘটেছে নিম্ন আয় থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে। এ ছাড়াও কৃষি,শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্নখাতে ব্যাপক উন্নতি অর্জিত হয়েছে। অয়ান্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্বীকৃতি অর্জন করায় সারা বিশ্বের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সাফল্য আজ প্রমানিত। এই সাফল্য ও স্বীকৃতির সমন্বয়ে বর্তমান সরকার রুপকল্প (ভিশন) ২০২১ অর্জনে বদ্ধপরিকর। 

গত দুই বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডে ও অগ্রগতির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে দেয়া হলঃ 
অর্থ, বানিজ্য ও পরিকল্পনাঃ
গত দু'বছরে গড় প্রবৃদ্ধির হারছিল ৬.৩ শতাংশ। এছাড়া মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৩১৪ মার্কিন ডলার, রিজার্ভ প্রায় ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রেমিট্যান্স ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক সিদ্ধান্তের ফলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অবসরকালীন সুবিধাদি উল্লেখ্যযোগ্য পরিমানে বৃদ্ধি করে ইতিমধ্যে জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের তুলনায় বাজেটের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৫৭ শতাংশ এবং বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৫ শতাংশ। Financial reporting act ২০১৫ অনুমোদন করাও সরকারের বিরাট সফলতা।
বর্তমানে ১৯৬টি দেশে ৭২৯টি পণ্য রপ্তানি করে আয় হচ্ছে ৩১।২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ WTO তে LDC কোঅর্ডিনেটরের ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় এ পর্যন্ত ১১টি উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ স্বল্পোন্নত দেশসমূহকে সেবাখাতে প্রেফারেনশিয়াল সুবিধা দিচ্ছে। টিসিবির মাধ্যমে গত দুবছরে ৩৮ হাজার ৮শ ৮৩ মেট্রিক টন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ন্যায্যমূল্যে বিক্রয় করা হয়। খাদ্যদ্রব্যের গুনাগুন বজায় রাখার লক্ষ্যে ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে।
গত দুবছরে ৬২টি একনেক বৈঠকে ৪২৯৮০৪.৪৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪১৭টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি দারিদ্র্য নিরসনের সাথে প্রত্যেক নাগরিকের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুমোদন (২০১৬-২০২০) করা হয়েছে।

শিক্ষাঃ
দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে উপবৃত্তি ও বেতন মোকুফ সহায়তা হিসেবে ৪৯লক্ষ ২৩ হাজার ৪৮৫ শিক্ষার্থীকে ৮৮০.২৭ কোটি টাকা বিতরন করা হয়। জাতিসংঘের বেধে দেয়া সময়সীমার তিন বছর আগেই ২০১২ সালে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাগত সমতা অর্জন করে। এটি সম্ভব হয়েছে মহাজোট সরকারের কঠোর পরিশ্রম ও আন্তরিকতার ফলে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের অংশ হিসেবে ১০০টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৩.১১ শতাংশ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। ঢাকায় একটি অটিস্টিক একাডেমী স্থাপনের জন্য পৃথকভাবে দুটি হোস্টেল নির্মান করা হবে যেখানে প্রতিটিতে ১০০ জন অটিস্টিক শিশুর আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। অটিজম বিষয়ক বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারপার্সন্ম সায়মা ওয়াজেদ এর আন্তরিক ও কঠোর পরিশ্রমে দেশের ওটিস্টিক ছেলে-মেয়েদের কল্যানে কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।
২০১৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নীট ভর্তির হার ৯৭.৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ঝরে পড়ার হার হ্রাস পেয়ে ২০.০৯ শতাংশে দাড়িয়েছে। ২০১৫ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ২.২৩ কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে ১১ কোটি ৫৯ লক্ষ ৯৭ হাজার ৯৭টি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের দপ্তরসমূহে ইন্টারনেট সংযোগসহ ৫৫টি পিটিআইতে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ৫ হাজার ৪৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ, মাল্টিমিড়িয়া,ইন্টারনেট মডেম ও সাউন্ড সিস্টেম সরবারহ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনঃ
বিভিন্ন সূচকে স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রতিফলিত হচ্ছে। মানুষের গড় আয়ু ৭০।৭ বছরে উন্নীত হয়েছে। অনুর্দ্ধ ৫ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার কমে প্রতি হাজারে ৪১ জনে দাড়িয়েছে। মাতৃমৃত্যু হারও কমে প্রতি লক্ষে ১৭০ জনে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে পোলিওমুক্ত দেশ হিসেবে সনদ লাভ করে। ৫টি আর্মি মেডিকেল কলেজসহ ১২টি সরকারি মেডিকেলে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রায় ৪০টি হাসপাতালের শয্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঢাকায় জাতীয় বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারী ইনস্টিটিউট নির্মানের লক্ষ্যে প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। প্রায় ৬৩০০ চিকিৎসককে নিয়োগ দিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পদায়ন করা হয়েছে। মবাইল ফোনে ১৬২৬৩ নম্বরে ২৪ ঘন্টা স্বাস্থ্যসেবা চালু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রস্তাবিত অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত প্রস্তাবনা পাস হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর গত দুই বছরে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৩১৮টি উৎপাদন নল্কূপ,৩৪টি পানি শোধানাগার, ১৯টি উচ্চ জলাধার,৭৪৩ কিলোমিটার বিভিন্ন ব্যাসের পাইপ লাইন, ৮৪০৩টি স্যানিটারি ল্যাট্রিন, ১৯০টি কমিউনিটি ল্যাট্রিন-পাবলিক টয়লেট স্থাপন করেছে।
কৃষি, খাদ্য ও শিল্পঃ
২০১৪-১৫ সালে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে ৩৮৪।১৮ লক্ষ মেট্রিক টন। উৎপাদনের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রায় ৭ হাজার ১০১ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। খামার যান্ত্রিকীকরনে ৩০শতাংশ ভর্তূকিতে যন্ত্রাংশ সরবারহের জন্য ১৭২।১৯ কটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন্সহ হাওড় অঞ্চলে কৃষিযন্ত্র সরবারহের জন্য ১০।৬০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। গত দুই বছরে খরা,বন্যা, লবনাক্ততা সহনশীলসহ রোগ প্রতিরোধক্ষম এবং উচ্চ ফলনশীল ৬৪টি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। কৃষকদের জৈবসার ও প্রাকৃতিক বালাইনাশক ব্যবহারে উৎসাহিত করার ফলে নিরাপদ ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।
২০১৫ সালে দানাশস্যের উৎপাদন ৩৫।৬৮ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য মজুদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে অভ্যন্তরীন উৎস হতে ১২ লক্ষ টন চাল এবং ২ লক্ষ ৪হাজার মেট্রিক টন গম সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০১৫ সালে মত খাদ্যশস্য মজুদ ছিল ১৫লক্ষ ৪৬ হাজার ৯৩৯মেট্রিক টন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান মহাজোট সরকারের সময়ই শ্রীলংকায় ২৫হাজার মেট্রিক টন চাল রপ্তানি হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ এই প্রথম অন্য দেশে চাল রপ্তানি করেছে। সরকারি খাদ্য বিতরন কর্মসুচির আওতায় ১১লক্ষ ২৭হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ৪লক্ষ ৪৭হাজার মেট্রিক টন গম বিতরন করা হয়েছে। সরকারি খাদ্য গুদামের ধারনক্ষমতা ১৯লক্ষ ৫০ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। সান্তাহার সাইল ক্যাম্পাসে ২৫০০০মেট্রিক টন ধারনক্ষমতাসম্পন্ন বহুতল গুদাম নির্মান সম্পন্ন হয়েছে।
বর্তমানে মৎস্য উৎপাদনে গড়প্রবৃদ্ধির হার ৬.২৩ শতাংশ। প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ লোক মৎস্যখাত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে। রুপকল্প ২০২১ অর্জনে লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩৫.৪৮ লক্ষ মেট্রিক টন মৎস্য ও চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। দুই বছরে প্রায় ১৬৫ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত মাছ উৎপাদিত হয়েছে এবং ১.৬১ লক্ষ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে ৯.৫ হাজার কোটি টাকার বৈদশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। মিঠা পানির মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ blue growth economyতে বাংলাদেশকে pilot country হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দুধের উৎপাদন ৬৯.৭০ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে মাংস ও ডিমের উৎপাদন যথাক্রমে ৫৮.৬ লক্ষ মেট্রিক টন ১ হাজার ৯৯ কোটি ৫২ লক্ষে উন্নীত হয়েছে।
ইউরিয়া সারের চাহিদা পূরনকল্পে বার্ষিক ৫ লক্ষ ৮০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন শাহজালাল সারকারখানা নির্মান প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। বিসিক ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশব্যাপী ক্ষুদ্র শিল্পে ৩৮৯০ ও কুটিরশিল্প খাতে ৮৯৩৪ জন সম্ভাবনাময় শিল্পোদ্যোক্তা চিহ্নিত করে তাদেরকে শিল্পস্থাপনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার পরামর্শ – সেবা- সহায়তা প্রদান করে আসছে । বিএসটিআই এর ফুড, মাইক্রবায়োলজী, সিমেন্ট ও টেক্সটাইল ল্যাবরেটরি ভারতের National Accreditiation Board for Testing Laboratories (NABL) থেকে এক্রিডিটেশন লাভ করেছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানীঃ
বিদ্যুৎ খাতে বর্তমান মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈর্ষনীয় সাফল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত দুই বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা (গ্রীড কানেকটেড) ১০২৮৯ মেগাওয়াট থেকে ১১৯৫২ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৬৬৭৫ মেগাওয়াট। ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন দাঁড়ায় ৮১৭৭ মেগাওয়াট। ২০১৩ সালের মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩২১ কিলোওয়াট আওয়ার হতে বর্তমানেও ৩৭১ কিলোওয়াট আওয়ারে উন্নীত হয়েছে। দৈনিক গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ২৭০০+ মিলিয়ন ঘনফুট হয়েছে এবং সাথে সাথে বিকল্প উৎস হিসেবে আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) চিহ্নিত করা হয়েছে। Floating Storage Re-gasification Unit (FSRU) স্থাপনের জন্য Excelerate Energy (EE) Singapore এর কারিগরি সহায়তায় দৈনিক ৫০০ এমেমসিএফডি (MMCFD) ক্ষমতাসম্পন্ন LNG TERMINAL স্থাপনের কাজ শেষ হলে ২০১৭ এ জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ যুক্ত করা সম্ভব হবে।
সড়ক-সেতু, রেল, নৌ ও স্থানীয় যোগাযোগ অবকাঠামোঃ
পদ্মা সেতুর মূল সেতু নির্মান এবং নদী শাসনের কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে দুটি সার্ভিস এরিয়া, কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মান সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের কাজ প্রায় ২৮ ভাগ শেষ হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মানের প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চট্রগ্রামের কর্নফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল নির্মানে চীন সরকারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ঢাকা- চটড়্গ্রামমহাসড়কের ১৯২ কিলমিটার এর মধ্যে ১৮৪ কিলোমিটার চারলেনেউন্নীতিকরন কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। পার্বত্য চট্রগ্রামে ২২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬টি মহাসড়ক উন্নয়ন করা হয়েছে। ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ থানচি- আলিকদম মহাসড়কটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। সিলেটে সুরমা নদীর উপর কাজীর বাজার সেতু, মাদারীপুরেসপ্তমবাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু, শেখ রাসেল সেতু, সুনামগঞ্জে সুরমা সেতু, বিরুলিয়া ও আশুলিয়া সড়কে বিরুলিয়া সেতু, আড়িয়াল খা সেতু, পুরাতন ব্রক্ষ্মপুত্রসেতু,কলাতলীসেতুসহবেশকিছু সেতুর নির্মান কাজ শেষ হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর যানযট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সূদরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও বিভাগ। এই ধারাবাহিকতায় প্রায় ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেডএক্সপ্রেসোয়ের কাজ শুরু হয়েছে। শাহজালাজ বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত বাস র্যা পিড ট্রানজিট (BRT) নির্মানের প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ হয়েছে। শেষ হতে চলেছে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ ৮০ কিলোমিটার চারলেনের কাজ। ইতিমধ্যে ২ লক্ষ ২১ হাজার ২৩৮ সেট ডিজিটাল নম্বরপ্লেট বিভিন্ন গাড়িতে সংযোজন করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২লাখ ৪২৫টি ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স বিতরন করা হয়েছে। সড়ক। সেতু মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অনুন্নয়ন খাতের আওতায় সার্ফেসিং ব্যতিত ১২৫ কিলোমিটার সড়ক পুনর্বাসন,২৭১ কিলোমিটার কার্পেটিংসহ সীলকোট, ১হাজার ৪৭৪ কিলোমিটার ওভারলে, ২৫৩ কিলোমিটার ডিবিএসটি,২১টি সেতু নির্মান/পুনঃনির্মান,১০৭টি কালভার্ট নির্মান/পুনঃনির্মান কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৫ সালে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা এবং ঢাকা-সিলেট-শিলং-গৌহাটি-ঢাকা রুটে বাস সার্ভিস চালু হয়। মতিঝিল-আব্দুল্লাহপুর রুটে এসি বাসে ই-টিকেটিং সিস্টেম চালু হয়েছে। বিআরটিসির আওতায় ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে গাবতলী ও মোহাম্মদপুরে ০২টি নতুন বাস ডিপো চালু হয়েছে।
রেলপথের উন্নয়নে ১১টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিকায়নসহ লাকসাম-চিনকি আস্তানা ৬১ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মান প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। সিগন্যালিংসহ টঙ্গী-ভৈরববাজার পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মান প্রকল্পের ভৌত কাজ ইতিমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। এছাড়া ১০০টি মিটার গেজ ও ১৭০টি ব্রড গেজ যাত্রীবাহী গাড়ী সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে।
পায়রা বন্দরের মূল অবকাঠামো গরে তোলার জন্য ৬হাজার একর জায়গা ক্রয় করা হয়েছে। সীমিত আকারে পায়রা বন্দরের কাজ শুরু করার জন্য ১১২৮ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পায়রা গভীর সমুদ্র বদরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে ‘প্রয়োজনীয় অবকাঠামো/সুবিধাদি উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বহুল প্রতীক্ষিত চট্রগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালের ৪টি জেটিতে কন্টেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ শুরু হয়েছে। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ ও শরীয়তপুরের মধ্যে এবং চাঁদপুরের মতলব ও নারায়নগঞ্জের মধ্যে দুটি নতুন রুটে ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলঅধিদপ্তরের (LGED)বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৯ হাজার ১৩৫ কিলোমিটার ( উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম) সড়ক, ৪৩ হাজার ২৫০ মিটার ব্রীজ/কালভার্ট নির্মান করা হয়েছে। রাজধানীর যানজট সমস্যা নিরসনে LGED বর্তমানে ৭৭৩ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে মগবাজার-মৌচাক সমন্বিত ফ্লাইওভার প্রকল্পের অধীন ৮.২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চারলেন বিশিষ্ট একটি ফ্লাইওভার নির্মানের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।
বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগঃ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে গত দু বছরে ৬৬৮.১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ কর্মসূচির আওতায় ২৪৩৯ জন ছাত্রছাত্রী/গবেষককে অর্থসহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপে ২৪০০ মেগাওয়াটবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষনতাসম্পন্ন রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন লক্ষ্যে রাশিয়ান ফেডারেশন নির্ধারিত ঠিকাদারের সাথে ৩টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ জেলা/উপজেলা পর্যায়ে ১৮,১৩০ টি সরকারি অফিসে কানেক্টিভিটি স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ,ভারত,নেপাল ও ভূটান আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে এবং বাংলাবান্ধা পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন ভিশনারি এওয়ার্ড ২০১৪, WITSA থেকে GLOBAL ICT Excellence Award-2014, এবং ইন্ট্যারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (ITU) থেকে ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি প্রাইজ-২০১৪ এবং ICT’s Sustainable Development Award 2015 অর্জন করেছে।মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা জুন ২০১৫ পর্যন্ত প্রায় ১৩.০২ কোটি এবং ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৫.৪৭০ কোটিতে পৌছেছে। টেলিডেনসিটি প্রায় ৮৩.০৯ শতাংশ এবং ইন্টারনেট ডেনসিটি প্রায় ৩৪.৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে সারাদেশে বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে জাতীয় পরিচয়পত্র ভেরিফিকেশনসহ সিম/রিম রেজিস্ট্রেশন র্যক্রম চালু করা হয়েছে। সরকারের অন্যতম বৃহৎ রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন জুলাই থেকে ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত ১৩৭৯.৩৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। ডাক অধিদপ্তর মোবাইল মানি অর্ডার সার্ভিস ও ক্যাশকার্ড চালু করেছে। এ পর্যন্ত ৩৫০০ ডাকঘরে পোস্ট ই-সেন্টার চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড ঢাকা শহরের ১ লক্ষ পুরাতন ডিজিটাল টেলিফোন সিস্টেম প্রতিস্থাপনসহ ১লক্ষ ৩৯ হাজার নতুন টেলিফোন সংযোগ নতুন টেলিফোন প্রদান করেছে। ৬৪ টি জেলায় ৯৮টি উপজেলার ১০০৬টি ইউনিয়নে ইতোমধ্যে প্রায় ৪৫০০ কিলমিটার অপ্টিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হয়েছে এবং ৩০০টি ইউনিয়ঙ্কে অপ্টিক্যাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এর দূরদর্শী ও সুচিন্তিত কর্ম পরিকল্পনার আলোকে টেলিটক ৩-জি প্রকল্পের আওতায় দেশের ৭টি বিভাগীয় এবং ৬৪টি জেলা শহরে ৩-জি প্রযুক্তি চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশ SEA-ME-WE-5 নামক সাবমেরিন ক্যাবল কনসোর্টিয়াম এর সাথে Construction & Maintenance Agreement স্বাক্ষর করেছে। সরকার বর্তমানে ব্যান্ডউইথের সর্বনিম্ন মূল্যনির্ধারন করেছে প্রতি এমবিপিএস ৬২৫ টাকা।
সমাজকল্যান ও সামাজিক নিরাপত্তা, ভূমিহীনে ভূমিদান এবং মহিলা ও শিশু উন্নয়নঃ
পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রমের আওতায় সুফলভোগীর সংখ্যা ২৪,১৫,০০০ জন। দরিদ্র নারীদের ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য পল্লীমাতৃকেন্দ্র কার্যক্রমের আওতায় বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলায় ৩১৮টি কর্মসূচির আওতায় সুফলভোগীর সংখ্যা ৮৩৪৯৬০। এসিডদ্বগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় সুফলভোগীর সংখ্যা ১,৫০,০৫০। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আটটি উদ্যেগের একটি হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্প। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১ম পর্যায়ে ঋণ কর্মসূচির আওতায় সুফলভোগীর সংখ্যা ৬১,৮৭৪। নারী ও শিশু উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগের ফলে দুস্থ মহিলারা ভাতা পেয়ে আসছেন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তাদুঃস্থ মহিলা ভাতাভোগীর সংখ্যা ১০.১২ লক্ষ। বয়ষ্কভাতাভোগীর সংখ্যা ২৭.২২৫ লক্ষ। অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪ লক্ষ। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫০০০০।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীকে আরো যুগোপযোগী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল অনুমোদন করা হয়েছে। এই কৌশল পাঁচ বছর মেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তামূলক ভাতা কর্মসূচির স্বচ্ছলতা নিশ্চিতকল্পে ভাতাভোগীর নিজ নামে ব্যাংক হিসাব খুলে ভাতার অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে। উপবৃত্তি প্রকল্পের আওতায় জুন ২০১৫ পর্যন্ত প্রতি মাসে সর্বোচ্চ প্রায় ৭৮ লক্ষ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। রিচিং আউট অব স্কুল চিল্ড্রেন (ROSC) প্রকল্পের অধীনে দরিদ্র পরিবারের ৩.৯০ লক্ষ শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগসহ ভাতা পাচ্ছে। দারিদ্র্যপীড়িত এলাকার ৩৩ লক্ষ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রতি স্কুল দিবসে উচ্চশক্তি ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন বিস্কুট বিতরন করা হচ্ছে। ৪৯,৫৫৯টি ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে প্রায় ২৮,৪৫৭ একর খাসজমির বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আওতায় ২৫৪টি গুচ্ছগ্রামে ১০,৭০৩টি ভূমিহীন ও গৃহায়ন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
সেপ্টেম্বর ২০১৪ এ ডিওক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড (DNA) আইন পাস হয়। ঢাকাসহ দেশের ৮টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের প্রয়োজনীয় সকল সেবা এক স্থান থেকে প্রদানের উদ্দেশ্যে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (OCC) স্থাপন করা হয়েছে। দুঃস্থ ও অসহায় এবং শারীরিকভাবে অক্ষম মহিলাদের খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি তাদের আত্মনির্ভরশীল করার লক্ষ্যে নির্বাচিত এনজিও'র মাধ্যমে প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়। এই কর্মসূচির উপকার ভোগীর ১০০ শতাংশই মহিলা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী ৭,৫০,০০০ জন নারীকে VGD সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়ঃ
দেশের জনগনকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আটটি উদ্ভাবনী উদ্যোগের অন্যতম ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’। এছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লি উন্নয়নের অংশ হিসেবে ‘চরজীবিকায়ন কর্মসূচি-২’ ‘সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি’, ‘পল্লি জনপদ (উন্নত আবাসন) সৃজন’, ‘ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট অফ দি পুওরেস্ট (EEP)’, ‘মিল্কভিটার কার্যক্রম সম্প্রসারন’, বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্যবিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমী’ প্রতিষ্ঠাকরন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে দেশব্যাপী গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৃষিভিত্তিক খামারের সংখ্যা ১৮.৭২ লক্ষ। ডিজিটাল বাংলাদেশের অবদানে সুবিধাভোগীরা অনলাইনের মাধ্যমে ২৫৭৩ কোটি টাকা লেনদেন করেছে। ইতোমধ্যে ৬৪ জেলার ৪৮৫টি উপজেলায় এ অনলাইন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বিআরডিবির আওতায় এ পর্যন্ত ১,৯৯,৬৮৮টি সমিতি ও দল গঠন করা হয়েছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেচ কার্যক্রমের আওতায় সদস্যদের মাঝে ১৮,৪৬০টি গভীর নলকূপ, ৪৪,৫২৩টি অগভীর নলকূপ, ১৯,৪০৫টি শক্তিচালিত পাম্প এবং ২,৭৩,০০০টি হস্তচালিত পাম্প বিতরন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (BARD) ৮৮টি প্রশিক্ষন, অবহিতকরন এবং কর্মশালা সংগঠনের মাধ্যমে ৩,৬৫১ জন অংশগ্রহনকারীকে প্রশিক্ষন প্রদান করেছে। চর জীবিকায়ন কর্মসূচির আওতায় কুড়িগ্রাম,জামালপুর, গাইবান্ধা,বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জ জেলার ২৮টি উপজেলার ২.৫০লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ পরোক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছে। 
প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস, জনপ্রশাসন ও কর্মসংস্থানঃ
‘ডাক ও টেলিটেলি যোগাযোগ মন্ত্রনালয়’ এবং ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়’ কে একীভূত করে ‘ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রনালয়’ পুনর্গঠন করা হয়েছে। ‘যোগাযোগ মন্ত্রনালয়’ এর নাম পরিবর্তন করে ‘সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়’ এবং এর আওতাধীন সড়ক বিভাগের নাম পরিবর্তন করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ করা হয়েছে। ২০১৪ সালে ৯ জন বরেন্য ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে এবং ২০১৫ সালে ৭ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে স্বাধীনতা পুরষ্কার প্রদান করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকল মন্ত্রনালয়/বিভাগ এবং দপ্তর/সংস্থা সমূহে সিটিজেন চার্টার প্রণয়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। জনপ্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতানিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে Grievance Redress System (GRS) চালু করা হয়েছে। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল ২০১২ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৫৯টি মন্ত্রনালয়/বিভাগ ওচিহ্নিত সংস্থায় নৈতিকতা কমিটি গঠন এবং কৌশল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা ও পরিবীক্ষণ কাঠামো করা হয়েছে।
বর্তমান মহাজোট সরকারের সময়ে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের জন্য সরকারি কর্মচারী আইন এবং পদায়ন/বদলি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া কর্মকৃতিভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে এবং সকল ক্যাডার কর্মকর্তার ডাটাবেইজপ্রস্তুত, পদোন্নতি নীতিমালা সংশোধন ও যুগোপযোগীকরন করা হয়েছে। সরকারি যানবাহন (ব্যবহার নিয়ন্ত্রন) আইন ২০১৪, বাংলাদেশ সিভিল (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪ এবং জনপ্রশাসন পদক প্রদান নীতিমালা ২০১৪ প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রনালয়,বিভাগ ও দপ্তরের ১,১০,৫৮৫ টি পদ সৃজন, ৫৭,৫৩২টি পদ সংরক্ষণ, ১১,৩৬৫টি পদ স্থায়ীকরন করা হয়েছে। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ৮,৩১২ জনকে নিয়োগ প্রদান, ২,১৫৮ জন নিয়োগের সুপারিশ এবং ৩৯৮৩জনের নিয়োগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। এ সময় ৬১৯ জন মৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরিবার এবং স্থায়ীভাবে অক্ষম ২ জন কর্মচারীকে মোট ৩০কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। NationalInitiative,Accordএবং ALLIANCE এর মাধ্যমে সকল গার্মেন্টস কারখানার Structural Integrity, Electrical & Fire Safety এর আওতায় নভেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত মোট ৩৬৬০টি কারখানা Assessmentকরাহয়েছে।
বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের বলিষ্ঠ উদ্যোগে অবৈধ ও অনিয়মিত অভিবাসন রোধ করা সম্ভব হয়েছে। অবৈধ ও অনিয়মিত অভিবাসন রোধকল্পে বিদ্যমান টাস্কফোর্স কে আরও বেগবান করার ফলে বিগত বছরে প্রায় ২ হাজার বাংলাদেশির অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।সিঙ্গাপুরের বিল্ডিং কনস্ট্রাকশানসেক্টরে নিরাপদ ও দক্ষ কর্মী প্রেরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো Sending Organization হিসেবে ১৪টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।জাপানেTechnical Intern প্রেরণের বিষয়ে International Manpower Development Organization, Japan এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মধ্যে MoUস্বাক্ষরিত হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সাথে এ সম্পর্কিত আর ৪টি টেকনিক্যাল এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়েছে।“বিভিন্ন জেলায় ৩০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন (২য় সংশোধিত)” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২৪টি জেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক দেশের ৬৪ জেলায় প্রায় ৯ হাজার ৫শ ১৩ জন বিদেশগামী কর্মীকে ‘অভিবাসন ঋণ’ প্রদান করেছে। তা ছাড়া বিদেশ ফেরত প্রায় ১৫০ জন কর্মীকে পুনর্বাসন ঋণ প্রদান করা হয়েছে।
আইনঃ
আদালতে এখন ভয়েসরেকর্ডারের মাধ্যমে সাক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে উচ্চ ও নিম্ন আদালতের দৈনন্দিন কার্য তালিকা ও মামলার সর্বশেষ তথ্য, পরবর্তী ধার্য তারিখসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে। ২০১৪-১৫ সময়কালে ৪৮টি আইন,১৫২টি চুক্তি এবং ৬৫১টি সংবিধিবদ্ধপ্রজ্ঞাপণ প্রণয়নের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আইন ও বিধিমালার নির্ভরযোগ্য অনুবাদ সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একনিষ্ঠ ও সাহসী পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ৭টি মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়েছে এবং ১০টি মামলা আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে।
পররাষ্ট্রঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী ফরেন পলিসি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ চিন্তাবিদদের একজন হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং জলাবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবিলা ও বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে সক্রিয় ও দৃশ্যমান ভূমিকা রাখায় তাঁকে ‘ডিসিশানমেকার্স’ ক্যাটাগরিতে শীর্ষ ১৩ জন চিন্তাবিদদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাজনীতিতে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ মর্যাদাপূর্ণWomen in Parliament(WIP) Global Forum Award 2015 পুরষ্কারেভূষিত হয়। ২০১৪ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনেস্কোর ‘শান্তি বৃক্ষ’ (Tree of Peace)পুরস্কার লাভ করেন। জাতিসংঘেরMillennium Development Goals (MDGs) অর্জনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। ২০১৪ সালে Commonwealth Parliamentary Association (CPA) এর নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন, Inter-Parliamentary Union (IPU) এর প্রেসিডেন্ট, Comittee on the Elimination of Discrimination Against Woman (CEDAW) এর সদস্য, International Mobile Satellite Organizatio(IMSO) এর মহাপরিচালক পদে বাংলাদেশের প্রার্থীরা নির্ভাবিত হন। একই বছর বাংলাদেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল, UNICEF Executive Board, International Labour Organization (ILO) এর গভর্নিং বডি এবং ITU Council এর সদস্য নির্বাচিত হয়। ২০১৫ এ UNESCO বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটকে UNESCO Category II স্ট্যাতাস প্রদান করে এবং জাতিসংঘ সাধার পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে। ২০১৪ সালে ঢাকায় BIMSTEC এর স্থায়ী সচিবালয় স্থাপিত হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে দুদেশের মধ্যে ২২টি উল্লেখযোগ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
পরিবেশ ও বনঃ
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত কার্যক্রমের স্বীকৃতিস্বরুপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত Champions of The Earth পুরষ্কারে ভূষিত হন। সুন্দরবন এনভায়রনমেন্টাল এন্ড লাইভলিহুড সিকিউরিটি (SELS) প্রজেক্টের মাধ্যমে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প আয়বর্ধক কর্মসংস্থান সৃষ্টিকরার ফলে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ উপকৃত হয়েছে। পরিবেশ দূষণকারী ৪০২টি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৮ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা সহ দেশের উপকূলীয় জেলাসমূহে প্রায় ২ লক্ষ হেক্টর এলাকায় বনায়নের মাধ্যমে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। ৫ লক্ষ পরিবারকে সামাজিক বনায়নের আওতায় আনা হয়েছে। ৭২ শতাংশ শিল্প কারখানায় ইটিপি স্থাপন সহ ৮ হাজার বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন এবং ১৫ লক্ষ উন্নত চুলা বিতরণ করা হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ই প্রথম জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে।
তথ্যঃ
অধিকতর সেবা এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে কার্যক্রম সম্পাদনের উদ্দেশ্য নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের জন্য ১৬ তলা বিশিষ্ট তথ্য ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমান জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সরকারী ভবনসমূহ নির্মাণ কার্যক্রম তরান্বিত হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য বিটিভি সদর দপ্তর ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তথ্য কমিশন দুবছরে ৮৮৭৮ জন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহ সাংবাদিক, সাব এডিটর, সাব ইন্সপেক্টর ও শিক্ষককে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে এবং ৫৮৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫৫৭টি নিষ্পত্তি ক্রএছে। অবশিষ্ট ৩০টি অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য প্রক্রিয়াধীন্ন রয়েছে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্তঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (RAJUK) আবাসন সমস্যার সমাধানে উত্তরা আদর্শ আবাসিক শহর (৩য় পর্ব), পূর্বাচল নতুন শহর ও ঝিলমিল আবাসিক শহরে মধ্যবিত্তের জন্য প্রায় ৯০ হাজার এপার্টমেন্ট নির্মাণ করছে। এ ছাড়া জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসন সমস্যার নিরসন এবং নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে বিক্রয়ের জন্য ৮৮৮১টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে। রাজধানীর কুড়াইল এলাকায় অংশীদারত্বের ভিত্তিতে প্রায় ৫০০০ ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে পূর্বাচলে দেশের সর্বোচ্চ ১৩০ তলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রঃ
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থল সীমানা সংক্রান্ত Land Boundary Agreement 1974 (মুজিব ইন্দিরা চুক্তি) অনুসমর্থন দলিল বিনময়ের মাধ্যমে কার্যকর হয়েছে। ১ আগষ্ট ২০১৫ কে Appointed day হিসেবে নির্ধারণপূর্বক উভয় দেশের মধ্যে ভূমি বিনিময় সম্পন্ন হয়। ফলে অপদখলীয় ভূমিসহ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডে অবস্থিত সকল ভারতীয় ছিটমহল বাংলাদেশের এবং ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত সকল বাংলাদেশী ছিটমহল ভারতের ভূখন্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও কঠোর পরিশ্রমে দীর্ঘদিনের সমস্যা নিরসন হয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর আধুনিকায়ন ও সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান ৫২৭টি বর্ডার অপারেশন পোষ্ট (বিওপি) এর অতিরিক্ত ৮০টি বিওপি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিসহ প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ বাংলাদেশি নাগরিকদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) এবং প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার মেশিন রিডেবল ভিসা (MRV) প্রদান করা হয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনঃ

৪ হাজার ৩শ ২ লক্ষ টাকা ব্যায়ে চট্টগ্রামস্থ হোটেল সৈকতের জমিতে ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন পর্যটন মোটেল নির্মাণ সমাপ্তির পথে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের টার্মিনাল ১ ও ২, অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল, ভি ভি আইপি কমপ্লেক্স, কন্ট্রোল টাওয়ার ভবন ও পাওয়ার হাউজ ফায়ার ডিটেকশন ও এলার্ম সিস্টেম স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড এর লাভের পরিমাণ ২৩৩.০৬ কোটি টাকা (অনিরীক্ষিত)।

বস্ত্র ও পাটঃ

বস্ত্র ও পাট খাতের বিদ্যমান সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে তা নিরসনের জন্য পাট আইন ২০১৫, বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠান আইন ২০১৫ ও বস্ত্রনীতি ২০১৫ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিবেশ বান্ধব পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০ এর আওতায় ধান,চাল,গম,ভুট্টা, সার ও চিনি মোড়কীকরণে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূল্ক করা হয়েছে।
প্রতিরক্ষাঃ



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তা চেতনায় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিকে যুগোপযোগী ও আধুনিকায়নের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিএমএ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ, ভাটিয়ারী, চট্টগ্রাম শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ত হয়েছে। বিমান বাহিনী্ ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ শক্তিশালী ও গতিশীল করার লক্ষ্যে বিএএফএ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ যশোর শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। Upgradation of Agro-Metrological Services শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ৭টি কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপন করা হয়েছে। Improvement of Digital Mapping, System of Survey of Bangladesh (Revised) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ঢাকা, রংপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও মৌলভীবাজারে ৬টি Permanent GNSS/GPS Station, Digital Mapping Unit (DMU) স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া সমগ্র দেশের Aerial Photography সম্পন্নকরণ সহ আন্তর্জাতিক সীমান্ত উপকূল ও সুন্দরবন এলাকার জন্য Sattelite Image ক্রয় করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কঃ

সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা ৮০০০ টাকায় এবং ভাতাভোগীদের সংখ্যা ২ লক্ষে উন্নীত করা হয়েছে এবং ৬৭৬ জন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাকে মাসিক ২০০০০ টাকা এবং বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মাসিক ১৫০০০ টাকা হারে সম্মানী ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণির যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারবর্গের মাসিক রাষ্ট্রীয় ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করে পঙ্গুত্বের হার অনুযায়ী মাসিক সর্বনিম্ন ১৮০০০ টাকা এবং মাসিক সর্বোচ্চ ৪৮০০০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য নিয়মিত ভাতা প্রদান একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ভূমিহীন ও অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্পটিতে ২৯৭১টি বাসস্থান নির্মাণের সংস্থান রাখা হয়েছে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৪৩টি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সকল উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ৮১টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৫৯টি স্মৃতিস্তভের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে।

ধর্মঃ

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় দুই বছরে ১,৫০০০০টি শিশুকে প্রাক প্রাথমিক ও নৈতিকতা শিক্ষা, ১০,২৯০০০ জন কিশোর কিশোরীকে সহজ কুরআন ও নৈতিকতা শিক্ষা এবং ৩৮,৪০০ জন নিরক্ষর বয়স্ক ব্যক্তিকে অক্ষরজ্ঞানদানসহ নৈতিকতা শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার এবং দুঃস্থ পুনর্বাসনের লক্ষ্যে মোট ৪২,৯৮,৮৬০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে হজ ব্যবস্থাপনা সিস্টেমে সকল হজযাত্রীর অনলাইন রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। প্রত্যেক হজযাত্রীকে এসএমএস এর মাধ্যমে হজ পূর্ব ৬টি নোটিফিকেশন প্রেরণ এবং মোবাইলের TVR সিস্টেমের মাধ্যমে হজ বুলেটিন ও তথ্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
সংস্কৃতিঃ
জাতীয় জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ১৫ জন সুধীকে একুশে পদক ২০১৫ প্রদান করা হয়েছে। ২০১৪ এ বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক এবং ২০১৫ এ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৫-১৭ মেয়াদে সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেসরকারি পাঠাগার অনুদান খাতে ১ হাজার ২৫টি পাঠাগারে ২ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এছাড়া চারুশিল্প, থিয়েটার ইত্যাদি খাত থেকে ৪ কোটি ৮৬ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা দেশের ১,১৭৪টি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে অনুদান প্রদান করা হয়।
পানি সম্পদঃ

গত ২ বছরে ১৯২.৪২ কিলোমিটার নদী খনন/ড্রেজিং সমাপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাপিটাল (পাইলট) ড্রেজিং অফ রিভার সিস্টেম ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় যমুনা নদীতে ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় পরীক্ষামূলক ড্রেজিং সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রাপ্ত ড্রেজড ম্যাটেরিয়ালস দ্বারা সিরাজগঞ্জ শহর সংলগ্ন নদী তীরবর্তী অংশে চারটি ক্রসবার নির্মাণ করা হয়। এতে প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার ভূমি স্থায়ীভাবে পুনরুদ্ধার করা হয়। উপকূলীয় এলাকায় নতুন জেগে উঠা চরে সমাপ্তকৃত চর ডেভেলপমেন্ট ও সেটেলমেন্ট প্রকল্পসমূহের আওতায় ১৭,৫৩৩ ভূমিহীন পরিবারকে ১৪,৭৯২ হেক্টর জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে।
যুব ও ক্রীড়াঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও খেলাধূলার প্রতি তাঁর বিশেষ অনুরাগের ফলে ক্রিকেট আজ বাংলাদেশকে বিশ্বে পরিচিত করে তুলেছে। ওয়ার্ল্ড টি টুয়েন্টি বাংলাদেশ ২০১৪ ও এশিয়া কাপ ক্রিকেট ২০১৪ এর সফল আয়োজন করে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ভারতকে হারিয়ে সাফ অনুর্ধ্ব ১৬ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা অর্জন করে এবং বিশ্ব হকি লীগের প্রথম পর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়। দেশের দরিদ্রতম ১৭টি জেলার ১৭টি উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিস কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং ১৪,৭১৮ জনকে প্রশিক্ষণ শেষে অস্থায়ী কর্মসংস্থানে নিযুক্ত করা হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের দরিদ্রতম ২০টি উপজেলায় এ কর্মসূচী বাস্তবায়নে নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা, দূরদর্শীতা ও রাষ্ট্রনায়কোচিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবার দ্বারপ্রান্তে। ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক দুই মেয়াদে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। ২০২১ সালে মধ্য আয়ের দেশ হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বে পরিচিতি পাবে- এলক্ষ্যে মহাজোট সরকারের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারলে বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে।